
ঘাটাইল প্রতিনিধি: ঘাটাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতার দখলে থাকা ৫ একর বনভূমি উদ্ধারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে জবরদখলকারীদের সঙ্গে যোগসাজশের সত্যতাও মিলেছে।
মঙ্গলবার, ৩ জুন এ অভিযান পরিচালিত হয় ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাগরদিঘি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হেকমত শিকদারের বিরুদ্ধে দখলমুক্ত করার জন্য।
সম্প্রতি দুদকের টাঙ্গাইলের জেলা কার্যালয়ের একটি তদন্ত দল ঘাটাইল উপজেলায় অভিযান চালায়। অভিযানে ধলাপাড়া রেঞ্জের সাগরদীঘি বিটের আওতাধীন কামালপুর মৌজার ৫০৭ দাগভুক্ত বন বিভাগের বিপুল সরকারি জমি হেকমত শিকদার কর্তৃক জবরদখলের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। দুদকের টাঙ্গাইলের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুর এ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, হেকমত শিকদার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হন। রেশন কার্ডের টাকা আদায়, কাবিখা কর্মসূচির শ্রমিকের মজুরির টাকা আত্মসাৎ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়াসহ বনের বিপুল ভূমি ক্ষমতার দাপটে দখলে রেখেছিলেন তিনি। এসব বিষয়ে স্থানীয়রা একাধিকবার প্রকাশ্য প্রতিবাদ এবং লিখিত অভিযোগ জানালেও সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন তিনি।
সরেজমিনে মঙ্গলবার কামালপুর এলাকায় দেখা যায়, মৌজার ৫০৭ দাগে ৫ একর বনভূমি দখল করে আওয়ামী নেতা হেকমত শিকদার লেবুর বাগান করেছেন। সেখানে দুদকের অভিযান পরবর্তীতে বন কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে সব লেবুগাছ কেটে ফেলা হচ্ছে।
লেবুর বাগানের শ্রমিক পারভিন আক্তার বলেন, আমরা বন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দিনমজুর হিসেবে বাগানের লেবুর গাছ অপসারণের কাজ করছি। তারা আমাদের বলেছেন, এই জায়গায় এখন বন কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক গাছ লাগানো হবে।
আরেক শ্রমিক সোহরাব আলী বলেন, এই জমি এতদিন হেকমত শিকদারের দখলে ছিল। বন কর্মকর্তারা এই বাগানের সব লেবু গাছ কেটে অপসারণের জন্য আমাদের দিনমজুর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তাই আমরা এখানে এখন কাজ করছি।
স্থানীয় লেবু ব্যবসায়ী রওশন বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হেকমত শিকদারের থেকে বছরে দেড় লাখ টাকা চুক্তিতে ওই বাগান দুই বছরের জন্য লিজ নিয়েছিলাম। এর মধ্যে এক বছর সময় শেষ হয়েছে। এখন বন বিভাগের কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন উক্ত ভূমি বন বিভাগের।
দুদকের টাঙ্গাইলের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুর এ আলম জানান, বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগসাজশে বনভূমি নিজেরাই ব্যক্তিগতভাবে দখলে রেখে অন্যদের দিয়ে চাষাবাদ করিয়ে বাড়তি সুবিধা আদায় করতেন। তারা সরকারিভাবে রাজকোষে কোনো টাকা জমা করতেন না। দুদকের একটি দল সাগরদীঘি বিট এলাকায় বনের জমি দখলের সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো সরেজমিনে যাচাই করে।
এ সময় তারা ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া রেঞ্জের সাগরদীঘি বিটের আওতাধীন কামালপুর মৌজার ৫০৭ দাগভুক্ত বন বিভাগের বিপুল সরকারি জমি জবরদখলের প্রাথমিক সত্যতা পান। প্রাথমিক তদন্তে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে জবরদখলকারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করার সত্যতাও মিলেছে।
ধলাপাড়া রেঞ্জের সাগরদীঘি বিট কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম আনসারি জানান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হেকমত শিকদারের দখলে থাকা প্রায় ৫ একর বনভূমিসহ দখলকৃত বেশ কিছু বনভূমি উদ্ধারে দুদকের অভিযান পরিচালিত হয়।