ঘাটাইল প্রতিনিধি: ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. হাবিবুল্লাহ্-এর বিরুদ্ধে পরিষদের উন্নয়ন বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, বরাদ্দের ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় মাত্র পাঁচটি ক্যামপ্রো ব্র্যান্ডের সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন তিনি, যার একেকটির দাম ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৮০০ টাকা। অথচ বাজার যাচাই করে জানা গেছে, সবচেয়ে ভালো মানের একটি ক্যামপ্রো সিসিটিভি ক্যামেরার দাম ২ হাজার ৪৫০ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকায় টাকার অঙ্ক ১ লাখ ৬৪ হাজার হলেও অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে পুকুরচুরির মতো ঘটনা। এরই মধ্যে অর্থবছর শেষ হলেও এই অর্থবছরে ইউনিয়ন পরিষদে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন নামে একটি প্রকল্প দেওয়া হয়।
সরেজমিন ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদের ভেতরে দুটি এবং পরিষদের বাইরে একটি গাছে স্থাপন করা হয়েছে ‘ক্যামপ্রো’ ব্র্যান্ডের তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরা। গাছের তিনটি ক্যামেরার মধ্যে একটি ভেঙে গেছে। পরিষদের সামনে ইউপি সদস্য মোকাম্মেল হোসেনের সাথে কথা হয়। প্রতিবেদক তাঁর বাসায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করবেন, এমন কৌশলে পরিষদে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এই ক্যামেরাগুলো ভালো। আপনি বাসায় লাগাতে পারেন।’ দাম কত? কতদিন আগে লাগানো হয়েছে? দামের বিষয়ে বলতে না পারলেও সময়টা বললেন, পাঁচ-ছয় মাস আগে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আরেকজন ইউপি সদস্য বলেন, ‘শুধু পাঁচটি সিসিটিভি ক্যামেরা কেনা হয়েছে, মনিটর বা অন্য কিছু কেনা হয়নি। কোথায় কোন প্রকল্প দেওয়া হয়, তা একমাত্র চেয়ারম্যানই ভালো জানেন। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন নারী ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগম। তবে কত টাকা দিয়ে ক্যামেরাগুলো কেনা হয়েছে, তা জানেন না তিনি; জানেন চেয়ারম্যান।
ক্যামপ্রো ক্যামেরার দাম যাচাই করতে ঢাকার আইসিটি ভবনে অবস্থিত ‘গোল্ডেন সান’ দোকানের মালিক আবু সাইদ জানান, ‘অডিও, ভিডিও এবং হাই রেজুলেশনের সবচেয়ে ভালো মানের ক্যামপ্রো সিসিটিভি ক্যামেরার দাম ২ হাজার ৮০০ টাকা। তবে আমরা বিক্রি করি ২ হাজার ৪৫০ টাকায়।’
সাগরদীঘি ইউপির হাতীমারা জালাল মেম্বারের বাড়ির মোড় থেকে আলালের বাড়ি হয়ে হোসেনের বাড়ি পর্যন্ত এবং সাগরদীঘি বাইপাস রাস্তা হয়ে আলীমের বাড়ির পাকা রাস্তা পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। মাটির কাজের এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা। স্থানীয়রা জানান, নামেমাত্র মাটি ফেলা হয়েছে রাস্তায়।
এ প্রসঙ্গে সাগরদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. হাবিবুল্লাহ্ বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য বরাদ্দের পুরো টাকা এখনও উপজেলা প্রকল্প অফিস থেকে উত্তোলন করা হয়নি। যা টাকা পাওয়া গেছে, সেই টাকা দিয়ে পাঁচটি ক্যামেরা ও একটি মনিটর কেনা হয়েছে। তবে মনিটর নষ্ট হয়ে গেছে। ক্যামেরার দাম কত? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তালিকা দেখে বলতে হবে। রাস্তার কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, ভালোভাবেই রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন প্রকল্পে টিআর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, যার পুরো টাকাই ইউপি চেয়ারম্যান উত্তোলন করেছেন। আর রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি। কাজে কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্পের সভাপতি ইরতিজা হাসান জানান, প্রকল্পের কাজে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।