কালীহাতী প্রতিনিধি: কালীহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে গ্রাহকের মুনাফার প্রায় লাখ টাকা কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গোবিন্দ সূত্রধর ও লিপি সাহা নামের দুই গ্রাহক ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ প্রতারণায় জড়িত পোস্টমাস্টার শাহজাহান আলীর কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগের তদন্ত শুরু হলেও এলেঙ্গার পোস্ট মাস্টার শাহজাহান আলী মুনাফার টাকা আত্মসাতের কথা অস্বীকার করছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পোস্টমাস্টারের প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা হলেন- গোবিন্দ সূত্রধর, এসবি হিসাব নম্বর- ৪১৪৫৩৮, ১০ হাজার টাকা। লিপি সাহা, এসবি হিসাব নম্বর-৫০৪১৩৯, ৪ হাজার ৫৮০ টাকা, নরেশ, এসবি হিসাব নম্বর-৪০৫৮৮৫, ১০ হাজার টাকা, অর্চনা রাণীর ১৫ হাজার টাকা। এছাড়াও সুবল চন্দ্র রায়, এফডি হিসাব নম্বর-৩৩১৫৭৭, ১৫ হাজার টাকা, জোসনা, এফডি হিসাব নম্বর-৪১৯৮১০, ১৫ হাজার টাকা, শিল্পী, এফডি হিসাব নম্বর-৪২২৭০০, ১০ হাজার টাকা, নরেশ, এফডি হিসাব নম্বর-৩৬৯৬২৮, মুনাফা কম দেয়ার পরিমাণ ১০ হাজার টাকা।
সরেজমিন পোস্ট অফিসের মুনাফা বিতরণ বইয়ের পাতায় এক এক গ্রাহকের স্বাক্ষর ভিন্ন রকম থাকলেও বিতরণকৃত টাকা নেওয়ার লেখা এক হাতে লেখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৪ জুন এলেঙ্গা পোস্ট অফিসে মাস্টার পদে যোগদান করেন শাহজাহান আলী। এর আগেও তিনি এলেঙ্গা পোস্ট অফিসের পোস্টম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ করেন, কালিহাতী উপজেলার মাইজবাড়ী গ্রামের বাড়ি হওয়ায় এলেঙ্গা পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার শাহজাহান কারো তোয়াক্কা করেন না। অফিসে যোগদান করার পর থেকেই যা খুশি তাই করছেন তিনি। গ্রাহক ও অফিস স্টাফদের সাথে করছেন রীতিমত অসৌজন্যমূলক আচরণ। জেলা ও বিভাগীয় অফিসের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে তার সখ্যতা থাকায় রীতিমত তিনি এই অফিসে অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে ফেলেছেন। হরহামেশায় তার বিরুদ্ধে শোনা যাচ্ছে গ্রাহককে মুনাফার টাকা কম দেয়ার অভিযোগ। এর ফলে গ্রাহকের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে এলেঙ্গা পোস্ট অফিস।
ভুক্তভোগী গোবিন্দ সূত্র জানান, প্রায় ১০-১২ বছর আগে এলেঙ্গা পোস্ট অফিসে আমি সঞ্চয়ী বইটি খুলি। এরপর থেকেই বইটিতে লেনদেন চালিয়ে আসছি। এখন প্রয়োজনে মুনাফার টাকা উত্তোলন করতে যাই। পোস্ট মাস্টার শাহাজাহান আলী আমার মুনাফা সাত হাজার ১৫৩ টাকা হয়েছে বলে জানায়। আমি সেই টাকাই নিজ হাতে লিখে উত্তোলন করি। হঠাৎ সন্দেহ হওয়ায় আমার বই নিয়ে টাঙ্গাইল অফিসে যাই। জানতে পারি আমি মুনাফা বাবদ পাবো ১৭ হাজার ১৫৩ টাকা। টাকা কম দেওয়ার কারণে আমি পোস্ট মাস্টারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি।
তিনি আরও জানান, টাঙ্গাইল অফিস থেকে তদন্ত এসেছিল। আমি আমার বাকি টাকা ফেরত পাওয়াসহ প্রতারক পোস্ট মাস্টারের কঠোর বিচার দাবি করেছি।
ভুক্তভোগী লিপি সাহা জানায়, আমি ১৪ হাজার টাকা মুনাফা পাবো। সেখানে আমাকে দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার ৪২০ টাকা। এ সময় মুনাফার টাকা কম দেওয়ার বিষয়টি বুঝতে না পারলেও বিভিন্ন জনের সঙ্গে এমন প্রতারণা করা হয়েছে। আমি টাঙ্গাইল অফিসে যোগাযোগ করি। ওই অফিসের মাধ্যমেই টাকা কম পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি।
এলেঙ্গা পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার শাহজাহান আলী মুনাফার টাকা কম দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে তদন্ত কর্মকর্তা ও টাঙ্গাইল পোস্ট অফিস পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা বলেন, অভিযোগের তদন্ত চলছে।
টাঙ্গাইলের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো. মোরশেদ আলম জানান, এলেঙ্গা পোস্ট অফিসের মাস্টার শাহজাহান আলীর বিরুদ্ধে গ্রাহকে মুনাফার টাকা কম দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।