ঘাটাইল বিদ্যুৎ অফিসে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ: গ্রাহকদের হয়রানি

অপরাধ ঘাটাইল দুর্নীতি প্রতিষ্ঠান

ঘাটাইল প্রতিনিধি: ঘাটাইল উপজেলা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ অফিস ও তাদের মিটার রিডিং কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মিটার রিডিংয়ের সঙ্গে বিলে আকাশ-পাতাল গরমিল, মিটার ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ যেন এখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে।

 

ঘাটাইল বিদ্যুৎ বিভাগ মিটার না দেখেই ইচ্ছে মত বিল করে। এতে ৪ হাজার থেকে ১৬ হাজার ইউনিট পর্যন্ত গরমিল দেখা গেছে বিলের সঙ্গে মিটার রিডিংয়ের। এমন ভূতুরে বিলের বোঝা ও বিদ্যুৎ বিভাগের বেপরোয়া অসহায় সেচ পাম্পের গ্রাহকরা।

এদিকে কয়েক সপ্তাহ আগে সেচ পাম্প মালিকদেরকে বকেয়া বিদ্যুৎ পরিশোধের নোটিশ প্রদান করেছেন ঘাটাইল বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (বিউবো)। এতে ৭ দিনের মধ্যে বকেয়া বিদ্যুৎ পরিশোধ করতে বলা হয়। অন্যথায় গ্রাহকদের মামলা দেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। মিটার রিডারদের এই ভূতুড়ে বিল ও অনিয়ম বন্ধে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

জানা যায়, উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়নের দিঘলকান্দি আনার গ্রামে ১৫ থেকে ১৬টি সেচপাম্প রয়েছে। গ্রাহকরা বছরে ২ বার বিল প্রদান করে থাকেন। সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাসে সেচ গ্রাহকরা তাদের সেচপাম্পের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছেন। কিন্তু তারপরেও এসব অনেক গ্রাহকদেরকে শূন্য ইউনিটের বিল দেখিয়ে ১৮ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত বিল করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগ।

উপজেলা বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ জানায়, উপজেলায় মোট ৪৭ হাজার ৪২১ জন গ্রাহক। তারমধ্যে প্রিপেইড মিটার ২৩ হাজার এবং ডিজিটাল মিটার ২৪ হাজার ৪২১টি এবং সেচ পাম্প রয়েছে ৯০৩টি।

ভূতুরে বিদ্যুৎ বিলের ভুক্তভোগী মোকছেদ আলী বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছি। তারপরেও শূন্য ইউনিটের ৩৯ হাজার ২৮১ টাকার বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে এবং ৭ দিনের মধ্যে বিল পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বিল না দিলে মামলা দিবে বলে জানিয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন দুর্নীতি করতে এমন হয়রানিতে ফেলেছেন।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, মিটার রিডিংয়ের কয়েক হাজার গরমিল রয়েছে বিলের কাগজের সঙ্গে। বিদ্যুৎ অফিসের কাছে আমরা টাকা পাওনা রয়েছে। বিল পরিশোধ করার পরেও উল্টো বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন অন্যায়ভাবে ভুয়া বিল এবং তারা যা ইচ্ছে তাই করছেন। প্রতিকার চাওয়ার জায়গা নেই।

ভুক্তভোগী সজিব বলেন, বিদ্যুৎ বিলের কাগজের সাথে মিটার রিডিংয়ের সাথে কোনো মিল নেই। এখনো বিদ্যুৎ অফিসের কাছে ১৬ হাজার ইউনিটের বেশি পাওনা রয়েছি। অথচ আমাকেও ভুয়া বিল ধরিয়ে দিয়েছেন। এর বিচার কোথায় দিব, বিদ্যুৎ অফিসে প্রতিকার চাইলে তারা বলে বিল পরিশোধ করতেই হবে, না হলে মামলা হবে।

আরেক ভুক্তভোগী তোরাব আলী বলেন, রিডিংম্যানরা কখনোই মিটার দেখে বিল করে না। ঘরে বসে মনগড়া ইউনিট বসিয়ে বিল করে। যার খেসারত আমরা সেচপাম্প মালিকরা দিচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের অনেকের মিটারও ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাছাড়াও মিটার বাণিজ্য তো করছেই। ঘাটাইলের এই বিদ্যুৎ অফিস দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আমাদের দাবি এই ভুয়া বিল থেকে মুক্ত করা হোক।

এ বিষয়ে ঘাটাইল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (বিউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক গ্রাহকের মধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু সমস্যা থাকতে পারে। আমাদের কাছে যারা অভিযোগ দিয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া কারো বিরুদ্ধে কোনো সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *