
নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলে ‘ত্রিবেণী টাঙ্গাইল’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরিচালনা করা বিনামূল্যে মাসব্যাপী সবার জন্য ইফতারের প্রশংসিত কার্যক্রম ব্যাপক সাড়া পড়েছে। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে প্রথম রোজা থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে গরিব-অসহায়, ভিক্ষুক, পথচারী, গাড়িচালক, ট্রাফিক পুলিশ ও টহল পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার চার শতাধিক মানুষ প্রতিদিন বিনামূল্যে অংশগ্রহণ করছেন। ‘ত্রিবেণী টাঙ্গাইল’কে বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ১৯৯২ সহযোগিতা করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিকাল ৪টা থেকে প্রায় ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবী নারী-পুরুষ ইফতারসামগ্রী প্রস্তুত করছেন। কেউ কেউ সারিবদ্ধভাবে প্লেটে ইফতার তৈরির পাশাপাশি প্যাকেটও করছেন। বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ট্রাফিক পুলিশের জন্য ৩০টি ও টহল পুলিশের জন্য ৩৫টি প্যাকেট সেখান থেকে নেওয়া হয়। সাড়ে ৫টা বাজতেই বিভিন্ন শ্রেণিপেশার রোজাদাররা দলে দলে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আসেন। এরপর তারা সারিবদ্ধভাবে নিজ দায়িত্বে পাটের তৈরি চটে বসে পড়েন।
এরপর ডিম, খেঁজুর, মুড়ি, ছোলা, শরবত, জিলাপি ও খিচুড়ি মাংসসহ প্রায় আট থেকে ১০টি আইটেম দিয়ে প্রস্তুত করা ইফতার সবার সামনে দেওয়া হয়। ইফতারের কিছুক্ষণ আগে সেখানে একজন হাফেজ দিয়ে দোয়া পরিচালনা করা হয়। দোয়া শেষে মাইকে সাইরেন বাজতেই সবাই একত্রে ইফতার করেন। সবার উপস্থিতিতে সেখানে একটি উৎসবে পরিণত হয়।
২০১৪ সাল থেকে পরিচালিত হওয়া প্রশংসিত কার্যক্রমটি টাঙ্গাইলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সবার জন্য ইফতার ইতোমধ্যেই সর্বস্তরের মানুষের মাঝে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সামর্থ্যহীন অসহায় মানুষসহ এখানে ইফতার করা রোজাদাররা ‘ত্রিবেণী টাঙ্গাইল’ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
এখানে প্রায় প্রতিদিন ইফতার করা ইসমাঈল হোসেন বলেন, ‘বিনামূল্যের ইফতার কার্যক্রমটি অনেক ভালো লেগেছে। আট থেকে ১০টি আইটেমের ইফতার পেয়ে আমি খুব খুশি। এখানে বিভিন্ন পেশার মানুষ একত্রে ইফতার করেন। সংগঠনটির এমন মহতী কার্যক্রম আমার খুুবই ভালো লেগেছে। এই মহতী কাজের জন্য আয়োজকদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
মিনা বেগম নামের এক বৃদ্ধা নারী বলেন, ‘আমি অসহায় মানুষ। রোজার শুরু থেকেই এখানে ইফতার করতে আসি। বাড়িতে ভালো কিছু খেয়ে ইফতার করতে পারি না। এই আয়োজনটি আমাদের মতো অসহায়দের জন্য অনেক উপকারে আসছে। আমরা অসহায়রা আয়োজকদের জন্য অনেক দোয়া করি।’
রাবেয়া বেগম নামের আরেক নারী বলেন, ‘আমরা অসহায় মানুষ। শুরু থেকেই এখানে ইফতার করতে আসি। আয়োজনটি অনেক ভালো লেগেছে। আমি মন থেকে তাদের জন্য দোয়া করি।’
এদিকে, শহরে কেনাকাটা করতে আসা অনেক পথচারীরাও এখানে ইফতার করছেন। তারা জানিয়েছেন, হাতে সময় কম থাকায় এবং রাস্তায় পাশেই এমন আয়োজন দেখে এখানে ইফতার করতে এসেছি। অনেকগুলো আইটেমের খাবার খেয়ে আমরা সন্তুষ্ট। আয়োজকদের কাছে দাবি, গরিব ও অসহায়দের জন্য এমন আয়োজন অব্যাহত থাকুক। সমাজের বিত্তবানদের এমন মহতী কাজে এগিয়ে আসা উচিত।
টাঙ্গাইল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক প্রকৌশলী জাহিদ রানা বলেন, রমজান মাসে বিনামূল্যে ইফতার কার্যক্রমের মতো এমন সুন্দর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ত্রিবেণী টাঙ্গাইল ও বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি ১৯৯২ ব্যাচের সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করবো, প্রতি বছর পবিত্র মাহে রমজানে এই ধরনের মহতী কাজটি অব্যাহত রাখবেন তারা।
ত্রিবেণী টাঙ্গাইলের সদস্য বিভূতি কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ত্রিবেণী টাঙ্গাইল ও বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি ১৯৯২ ব্যাচ সম্মিলিতভাবে ইফতার কার্যক্রমটি পরিচালনা করে আসছে। আমাদের এখানে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ লোকজন ইফতার করেন। পথচারী, গাড়িচালক, ভিক্ষুক, দোকানদারসহ প্রায় সব পেশার মানুষ আসেন। খুবই আনন্দের সঙ্গে তারা ইফতার করেন। আমাদের ইচ্ছে আছে, এই কার্যক্রমটি অব্যাহত রাখার।
তিনি আরও বলেন, ইফতার কার্যক্রম ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সামাজিক দুর্ভোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি আমরা। যেমন বন্যা ও শীতের সময়ে দরিদ্র মানুুষের সহযোগিতা করা হয়। আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব তাদের জন্য করার চেষ্টা করি। এ ছাড়া সংগঠনের সদস্যরা স্বেচ্ছায় রক্তদানও করেন।
ত্রিবেণী টাঙ্গাইল-্এর সভাপতি বাপ্পি খান বলেন, আমাদের ইফতার কার্যক্রম ২০১৪ সাল থেকে চলে আসছে। মাসব্যাপী বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য বিনামূল্যে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। অসহায়, গরিব ও গাড়িচালক ছাড়াও শহরে কেনাকাটা করতে আসা মানুুষও ইফতার করতে আসেন। ডিম, কলা, ছোলা, মুুড়ি, পেঁয়াজু, শরবত, জিলাপিসহ প্রায় ১০টি আইটেম দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে খিচুড়ি মাংসও দেওয়া হয়। ট্রাফিক পুলিশ ও টহল পুলিশের ৬৫ জন সদস্যের ইফতার আমরা প্যাকেট করে দিই। সবমিলিয়ে প্রতিদিন চার শতাধিক মানুষের জন্য এখানে ইফতারের আয়োজন করছি আমরা।
সামাজিক সংগঠন ত্রিবেণী টাঙ্গাইল-এর সভাপতি বাপ্পি খান আরও বলেন, এ ছাড়া বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি ১৯৯২ ব্যাচের ৬০ জন রয়েছেন। ১২০ জন মিলে ইফতার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। আমরা ১২০ জনে মিলে কার্যক্রমের অর্থ ব্যয় করি। এটি সবার জন্য একটি বার্তা। আমাদের মতো অন্যান্য জেলায় বিনামূল্যে ইফতার বিতরণের কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন।