টাঙ্গাইল পার্ক বাজারে পৌরসভার অবৈধ দোকান নির্মাণ

টাঙ্গাইল পার্ক বাজারে পৌরসভার অবৈধ দোকান নির্মাণ প্রতিহতের ঘোষণা

টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল সদর ফিচার

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল শহরের পার্ক বাজারে সরকারি জমিতে পৌরসভার দোকান নির্মাণকে কেন্দ্র করে পার্ক বাজার ব্যবসায়ী সমিতি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তাঁরা মিছিল-সমাবেশ করে দোকানের দেয়াল ভেঙে ফেলে নির্মাণাধীন দোকানের ভেতর পতাকা টানিয়ে দিয়েছে। দোকান নির্মাণ বন্ধ করা না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে। কোনভাবেই সরকারি জমিতে টাঙ্গাইল পৌরসভার অবৈধ দোকান নির্মাণ করতে দিবে না বলে ঘোষাণা দিয়েছে।

 

জানা যায়, টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামের পাশেই এক সময় ছিল বিশাল একটি পার্ক; যা ছিল পৌরসভার মানুষের বিনোদনের একমাত্র স্থান। ১৯৭৭ সালে টাঙ্গাইল ছয়আনি কাঁচা বাজার ভেঙে একতলা মার্কেট নির্মাণ হলে ওই বাজারের দোকানদারদের অস্থায়ীভাবে পার্কের ভেতর দোকান করার অনুমতি দেওয়া হয়।

 

পরবর্তীতে ওই জমিতে ১৯৮৯ সালে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান চাঁদ বাজার (পার্ক বাজার) নামে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি আনেন। এছাড়া, বাজারের দু’পাশে নামাজের মাঠ সংলগ্ন ও বাজারের পূর্ব পাশে তোহা বা উন্মুক্ত রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।

 

বাজারের পূর্ব পাশ দিয়ে ঢোকার রাস্তার পাশেই মাছের বাজার। মাছ বাজার সংলগ্ন স্থানে দীর্ঘদিন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় ছিল। মাছের গাড়ি ও রাস্তায় ময়লা কর্দমাক্ত থাকায় বাজারে ঢুকতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কষ্ট হতো। সম্প্রতি পৌরসভা জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বাজারে ভেতর রাস্তার কিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছে।

বাজারে ঢোকার পূর্বপাশে খাস খতিয়ানভুক্ত জমির একটি অংশের রাস্তা পাকা করেছে। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শহরের পানি নিষ্কাশনের প্রধান ড্রেন। সেই ড্রেনের পাড়ে পৌরসভা দোকান বানিয়ে কোটি টাকা বাণিজ্যের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে পার্ক বাজার ব্যবসায়ী সমিতি।

 

সমিতির অভিযোগ সেখানে দোকান নির্মাণ হলে বাজারে মানুষ ঢুকতে পারবে না। এছাড়া মাছের গাড়ি ও বাজার করতে আসা লোকজনের গাড়ি রাখার কোন জায়গা থাকবে না। এ ঘটনায় বাজারের ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে নির্মাণাধীন দোকানের দেয়াল ও বাইরে টিনের ঘের ভেঙে ফেলেন।

সরেজমিন দেখা যায়, দোকান নির্মাণের জন্য ইট বালি এনে রাখা হয়েছে। রাস্তার পাশে টিনের বেড়া ও দোকানের ইটের দেয়াল ভেঙে ফেলে দোকানের ভেতরে ছোট একটি জাতীয় পতাকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বন্ধ রয়েছে নির্মাণ কাজ। পাশেই মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের দেয়াল ঘেষে নতুন দোকান নির্মাণের জন্য জায়গা রাখা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে সেখানেও দোকান র্নির্মান হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে সেখানে দোকান নির্মাণ হলে আলো ও বাতাস থেকে বঞ্চিত হবে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে ড্রেনের উপরে নিয়ম বহির্ভূত অবৈধভাবে নির্মাণ শ্রমিকদের নামে একটি দোকান তৈরী করা হচ্ছে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে ওই দোকনের নির্মাণ কাজ। বাণিজ্য করতেই নাকি ওই দোকান নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে পৌরসভা এমন অভিযোগ ব্যবসায়ীরা করলেও পৌরসভার মেয়র জানান, শ্রমিকরা তাদের নিজেদের টাকা দিয়েই তাদের অফিস তৈরি করছে।

পার্ক বাজারের ব্যবসায়ী মেসার্স বাবলু স্টোরের মালিক বাবলু মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারের কোন ভাল পরিবেশ নেই। যেখানে একটু ফাঁকা জায়গা পাচ্ছে সেখানে দোকান নির্মাণ করে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছে একটি চক্র। এভাবে চলতে পারে না। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে নজর দেওয়া।

জেলা মৎসজীবী লীগের প্রধান উপদেষ্টা মোঃ আমীর হামজা ব্যাপারী বলেন, বাজারে আমাদের মাছের গাড়ি ঢোকার ও রাখার কোন ব্যবস্থা নেই। যেখানে গাড়ি থাকতো সেখানে পৌরসভা অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করছে। তাহলে আমাদের মাছের গাড়ি কোথায় থাকবে। পৌরসভা এখানে কোনভাবেই দোকান নির্মাণ করতে পারে না।

পার্ক বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল বারেক মিয়া বলেন, পৌরসভা যেখানে দোকান করছে ওই জমি খাস খতিয়ানের। ওই জায়গা উম্মুক্ত থাকার কথা। সেখানে পৌরসভা অবৈধভাবে দোকান বরাদ্দ দিয়ে বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে। এছাড়াও সেখানে মাছের গাড়ি ও বাজারে কেনা কাটা করতে আসা লোকজনের গাড়ি পার্কিং থাকবে। বাজারের পূর্বপাশের রাস্তার সাথে বিন্দুবাসিনী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের গেট।

বিকল্প হিসেবে ওই গেট দিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বের হয়। উম্মুক্ত ওই জায়গায় মার্কেট নির্মাণ হলে গাড়ি পার্কিং করতে হবে রাস্তার উপর। রাস্তায় গাড়ি পার্কিং হলে যানজট যেমন বাড়বে, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বের হওয়া সমস্যা হবে। তাই আমরা কখনও তা করতে দিব না। পৌরসভার এই অবৈধ দোকান নির্মাণ প্রতিহত করা হবে।

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, জেলা প্রশাসনে অনুমতি নিয়েই পৌরসভা ওই জমিতে দোকান নির্মাণ করছে। অবকাঠামো নির্মাণ ও বাস্তবায়ন করছে পৌরসভা। কিন্তু দোকান বরাদ্দ দেবে জেলা প্রশাসন। এখানে পৌরসভার বাণিজ্যের কোন সুযোগ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *