মির্জাপুর প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন গোড়াই হাইওয়ে থানায় দুস্কৃতিকারীদের হামলার ঘটনা চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে কলেজ ছাত্র ইমন (১৮) নিহতের ঘটনায় মির্জাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত ইমনের ভাই সুমন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট সন্ধ্যায় ওই হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় সাবেক দুইমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ও আহসানুল ইসলাম টিটু এবং টাঙ্গাইলের সাবেক ৭জন সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ, তানভীর হাসান ছোট মনির, হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, মোঃ ছানোয়ার হোসেন, এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম, আমানুর রহমান খান রানা, অনুপম শাজাহান জয়কে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া এই মামলায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা ও কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ আরও ১৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড়মনি, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন, সাইফুজ্জামান খান সোহেল, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ লিটন, যুগ্ম-সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুর রহমান আকন্দ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভর ব্যক্তিগত সহকারী মীর আসিফ অনিক, মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক সেতাব মাহমুদ, গোড়াই ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর, উয়ার্শী ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মল্লিক, আজগানা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের শিকদার, আনাইতারা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল ময়নাল, ফতেপুর ইউনিয়র আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ এবং ভাওড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন প্রমুখ।
নিহত ইমন গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নলিন মন্ডল বাড়ী এলাকার জুলহাস মিয়ার ছেলে। তিনি অলোয়া মনিরুজ্জামান খান বিএম কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করে হেমনগর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট বিকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই হাইওয়ে থানায় একদল দুস্কৃতকারী হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় ওই স্থানে মহাসড়কের উপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছিল। সমাবেশ চলাকালে দুস্কৃতকারীরা থানা ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
পুলিশের সাথে দুস্কৃতিকারীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় ইমন পেটে গুলিবিদ্ধ হন। আহতাবস্থায় তাকে প্রথমে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ১৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় গত রবিবার, ১৮ আগস্ট ভোরে তিনি মারা যান।
মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) সালাহ উদ্দিন জানান, নিহত ইমনের ভাই সুমন বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় ১৫৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০০-৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটির তদন্তের পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।