জুলজাস গায়েন, সখীপুর প্রতিনিধি: যত দূর চোখে দেখা যায় চারদিকে সবুজ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন গাছ। সবুজ গাছে বাতাসে দুলছে গোলাপি, লাল আর সবুজ ফল। স্বপ্নীল এ বাগানটি গড়ে তুলেছেন প্রতিমাবংকি, পশ্চিম পাড়ার প্রবাসী ফেরত শফিকুল ইসলাম। ইউটিউবে দেখে শখের বশে তিনি এই ফলের চাষ করেছেন বলে জানান। উপজেলার অনেকেই তার সাফল্য দেখে এখন উৎসাহী হয়ে উঠেছেন ড্রাগন চাষে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাছের অবলম্বন হিসেবে একটি কংক্রিটের ছয় ফুট পিলার পুঁতে দেয়া হয়েছে। পিলারের মাথায় বসিয়ে দেয়া হয়েছে মোটরসাইকেলের পুরনো টায়ার। চেইন ক্যাকটাসের মতো দেখতে ড্রাগন গাছগুলো পিলার বেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ধরেছে ফুল ও ফল। প্রতি পিলারের পাশে তিন থেকে চারটি চারা। কাটিং লাগানো হলে প্রতি কাটিং থেকে ১২ থেকে ১৪টি ফল পাওয়া যায়। আকারভেদে ফলের ওজন ৩০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।
সখীপুর উপজেলার প্রতিমাবংকি, পশ্চিম পাড়ার শফিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন প্রবাসী ছিলাম। ইউটিউবে ড্রাগন চাষ দেখে মনে মনে ইচ্ছে পোষেণ করি আর প্রবাস জীবন নয়। বাড়ী গিয়ে ড্রাগন চাষ করবো। দেশে ফিরেই প্রতিবেশী অনাবাদী ৮ একর জমি লিজ নিয়ে ৩২০০ পিলার-এ ১৭ হাজার ড্রাগনের চারা লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করি। এক বছর পর প্রথম ফল বিক্রি করেছি ২০ লাখ টাকার। ক্রমান্বয়ে ড্রগন চারা বয়স বাড়বে, ফলনও বাড়বে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আগামী বছর এ বাগান থেকে ৫০ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরোও জানান, এই সাফল্য দেখে চলতি বছর ১০ একর পতিত জমিতে ড্রাগন ফলের চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাজারে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগবালাইও কম। তাই যে কেউ সহজেই এই ফল চাষ করতে পারেন।
ড্রাগন চাষী শফিকুল ইসলামের ছোট ভাই সাঈদুল ইসলাম স্বপন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’ তা বাস্তবায়নে যে সব কৃষকের উঁচু পতিত জমি রয়েছে সেখানে সহজেই ড্রাগন ফল চাষ যায়। আমি ইতিহাসে অনার্স করেছি। চাকরি পিছনে না ঘুরে ভাইয়ের ড্রাগন বাগানসহ ৫০ একর জমিতে কলা চাষ করছি। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চাকরী নয় ব্যবসা করা উত্তম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, এই জমিটি অনাবাদী ছিল। প্রবাসী ফেরত শফিকুল ইসলামের ড্রাগন ফলের চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। বেকার না থেকে এই ড্রাগন চাষেই নিজে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজের উপজেলায় ড্রাগন চাষের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখছেন। শফিকুলের সফলতা দেখে এলাকার শিক্ষিত যুবকরাও ড্রাগনের চাষে ঝুকছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মণ বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় ড্রাগন চাষ লাভজনক। চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগ বালাইও কম। তাই চাষিরা সহজে এই ফল চাষ করতে পারে। উপজেলায় একাধিক কৃষক চলতি বছর ড্রাগন চাষ করেছেন। ফলনও ভাল হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে যারা এই চাষে আগ্রহী তাদের সঠিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ড্রাগন চাষ এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে।
তিনি আরো জানান, বছরের যে কোনো সময় তিন মিটার পরপর গর্ত করে চারা রোপণ করতে হয়। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হলে ভালো। সিমেন্ট অথবা বাঁশের খুঁটিতে গাছ বেঁধে দিতে হয়। গাছে ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফল ধরে। প্রতিটি ফলের ওজন হয় ২০০-৬০০ গ্রাম। ১২-১৮ মাস বয়সী একটি গাছে ৫-২০টি ফল ধরে। পরিপক্ব একটি গাছে সর্বোচ্চ ৮০টি ফল পাওয়া যায়।