বাসাইলের ফুলকিতে ৫ বছরেও নির্মিত হয়নি হেলে পড়া সেতু

বাসাইলের ফুলকিতে ৫ বছরেও নির্মিত হয়নি হেলে পড়া সেতু

ফিচার বাসাইল

বাসাইল প্রতিনিধি: বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নে উদ্বোধনের আগেই হেলে পড়া সেতুটি ৫ বছরেও নির্মিত হয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেতুটি না থাকায় পার্শ্ববর্তী ১০ গ্রামের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।

উদ্বোধনের পূর্বেই হেলে পড়া সেতুটি উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের নিরাইল এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিজ খরচে পুনরায় সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় প্রকল্প পরিচালক। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগ রয়েছে বাসাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে পার পেয়ে গেছেন ওই ঠিকাদার।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাসাইল উপজেলার ফুলকি-ফুলবাড়ি সড়কের নিরাইল এলাকায় অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে উদ্বোধনের আগে হেলে পড়া সেই সেতুটি। এলাকাবাসীর অভিযোগ বারবার জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সেতুটির বিষয়ে কোন প্রকার সুরাহা আজো হয়নি।

সূত্র মতে, গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় মোট ১২৮টি সেতু নির্মাণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের ফুলকি-ফুলবাড়ি সড়কের নিরাইল এলাকায় ৬০ ফুট দীর্ঘ সেতু নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স আব্দুল্লাহ এন্টারপাইজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় উদ্বোধনের পূর্বেই সেতুটি হেলে পড়ে।

এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিন তদন্ত শেষে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিজ খরচে সেতুটি পুনরায় নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এর পরই ঠিকারদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটি পুনরায় নির্মাণের লক্ষে সেতুর বিভিন্ন অংশ ভাঙা শুরু করে। এর অংশ হিসেবে সেতুটির উপরের অংশ ভেঙে রড বের করে নিয়ে যায়। কিন্তু এরপর ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটি পুনরায় নির্মাণ না করে দিয়ে কাজ শেষে করে বিল তুলে নেয়।

ওই সময় অভিযোগ ওঠে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন সাত লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতিবেদন দেন। এতে করে ওই প্রতিষ্ঠান পুনরায় কাজ শেষ না করেই সেতুটি ভেঙে ব্যবহৃত রড ও কংক্রিট নিয়ে যায়। এতে করে সড়ক ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারন করে।

এদিকে দীর্ঘদিনেও ফুলকি-ফুলবাড়ি সড়কের নিরাইল এলাকায় সেতু নির্মাণ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী বালিয়া, ফুলকি, ফুলবাড়ি, বাঘিল, নিরাইলসহ অন্তত ১০ গ্রামের মানুষের। একজন মুমূর্ষ রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে ১০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হচ্ছে।

নিরাইল এলাকার বাসিন্দা রবি মিয়া বলেন, হেলে পড়া সেতু দিয়ে বড় গাড়ি চলাচল না করতে পারলেও সাধারণ মানুষ পাড় হতে পারতো। কিন্তু সেতুটি ভেঙে ফেলায় এখন আমাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। আমাদের এলাকা কৃষি প্রধান এলাকা। সেতুটি না থাকায় আমরা কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাই না।

স্কুলছাত্র মো. রামিম বলেন, বর্ষা মৌসুমে আমাদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় অনেক সময় আমাদের বই খাতা ভিজে যায়।

ফুলকি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সামছুল আলম (বিজু) বলেন, যখন ওই সেতুটি নির্মাণ হয়, তখন আমি চেয়ারম্যান ছিলাম না। তবে আমি চাই আমার এলাকার জনগণের সুবিধার জন্য ওই স্থানে একটি সেতু পুনরায় নির্মাণ হোক। এজন্য আমি খুব শিগগিরই জেলা প্রাশাসক বরাবর একটি আবেদন করবো।

এ ব্যাপারে জানতে বাসাইল উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্ষতি হবে জেনে সেতুটি পুনরায় নির্মাণ করে দেয়নি। এছাড়া ওই স্থানে প্রতিষ্ঠানই সেতু নির্মাণের কোন প্রকার প্রকল্প পুনরায় হাতে নেয়নি বলেও তিনি জানান।

জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে যাচাই বাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জনগণের সুবিধার জন্য সেতুটি পুনরায় নির্মাণ করার জন্য খুব শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *