
নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহন নির্বাচনী গণসংযোগ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে আজ রাত আটটার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহমুদুল হক। হামিদুল হক মোহনের বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। প্রবীণ এই রাজনীতিক আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ জানান, ১২ অক্টোবর দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দেন হামিদুল হক মোহন। এ জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেন। এর অংশ হিসেবে সোমবার বিকেলে উপজেলার দেউলী ইউনিয়নে যান। সেখানে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত দলের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন। সভা শেষ করে পাশের মসজিদে সন্ধ্যায় নামাজ পড়েন। পরে নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কয়েকটি গাড়ি নিয়ে টাঙ্গাইল শহরের উদ্দেশে রওনা হন। কিছু দূর যাওয়ার পর অসুস্থ বোধ করেন। তাঁকে অচেতন অবস্থায় টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সিসিইউতে তাঁকে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
ব্যক্তিজীবনে হামিদুল হক মোহন স্ত্রী, দুই ছেলে, তিন মেয়ে রেখে গেছেন। বর্তমানে তাঁর মরদেহ টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকার বাসভবনে নেওয়া হয়েছে। তিনি ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের (ভাষা–মতিন) ভগ্নিপতি।
হামিদুল হকের বড় ছেলে মিল্টন হক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাঁর বাবার দাফন করা হবে।
হামিদুল হক মোহনের গণসংযোগে উপস্থিত ছিলেন নাগরপুর উপজেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাবেক সভাপতি প্রভা রানী শীল। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর আগে দেউলী গ্রামে শেষ বক্তৃতায় আবেগঘন বক্তব্য দেন মোহন ভাই। তিনি নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলেন ‘আমার মাথার চুল সব পেকে গেছে। তাই মনে করবেন না যে আমি আপনাদের কাজ করতে পারব না। আমি মৃত্যুর আগপর্যন্ত জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।’
উল্লেখ্য, হামিদুল হক মোহন স্কুলছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) মাধ্যমে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে তিনি টাঙ্গাইল জেলা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। স্বাধীনতার পর ভাসানী ন্যাপের রাজনীতে যুক্ত হন। পরে ভাসানী ন্যাপ বিএনপির সঙ্গে একীভূত হলে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন। তিনি টানা ১৭ বছর জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি টাঙ্গাইল নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন।