টাঙ্গাইলের ৫০ জন ১২০ টাকায় আবেদনের মাধ্যমে পুলিশে চাকরি পেলেন

আইন আদালত টাঙ্গাইল সদর প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১২০ টাকায় আবেদনের মাধ্যমে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি পেলেন টাঙ্গাইল জেলার ৫০ জন। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে এ নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও ঘুষমুক্তভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।

 

পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, টাঙ্গাইল জেলায় এ বছর টিআরসি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মোট ৩ হাজার ৩১২ জন আবেদনকারী প্রাথমিকভাবে বাছাই হন। তাদের মধ্যে শারীরিক মাপ ও কাগজপত্র যাচাইয়ের পর ১ হাজার ৫৫১ জন প্রার্থী সহনশীলতা পরীক্ষায় অংশ নেন।

 

রোববার রাতে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস গ্রিলশেডে ফলাফল প্রকাশ করেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। এ সময় ৫০ জনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। আর এর মধ্যে দিয়ে টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার মাত্র ১২০ টাকায় ৫০ জনকে পুলিশে চাকরি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কৃষক মুক্তেল হোসেনের ছেলে মিলন। স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। এরই মধ্যে চাকরি হওয়ায় তিনি বেশ খুশি। মিলন বলেন, আমার বাবা কৃষি কাজ করে। পুলিশের চাকরির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে ১২০ টাকা লেগেছে। সেই ১২০ টাকার বিনিময়ই চাকরি পেয়ে আমার স্বপ্ন পূরণ হলো। ‌‘বিষয়টি শুনে আমার মা-বাবাও অনেক খুশি। আমিও অনেক আনন্দিত। যা ভাষাই প্রকাশ করার মতো নয়। আমার বাবা অনেক কষ্ট করে কৃষি কাজ করে আমার পড়ালেখার খরচ চালিয়েছে। এতে বাবার মুখে হাসি ফুটাতে পেরে আমি গর্বিত।’

শুধু মিলন নয় তার মতো আরও ৫০ জন টাঙ্গাইল জেলায় ১২০ টাকায় আবেদন করে প্রাথমিকভাবে পুলিশে চাকরি নিশ্চিত হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই কৃষক, দিনমজুরসহ হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

চাকরি পাওয়া হাসিবুল হাসান সৌরভ বলেন, পরীক্ষার পরে আমরা উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি জন্মের পরেই শুনে এসেছি পুলিশের চাকরি পেতে ‘ঘুষ কিংবা মামা ও খালার জোর ছাড়া হয় না’। এই প্রথম আমরা দেখতে পারলাম নিজের যোগ্যতায় কোনো টাকা ছাড়াই শুধু ১২০ টাকার বিনিময়ে চাকরি হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা পুলিশকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। পুলিশের চাকরি করে দেশের সেবা করতে চাই।

মিলি বলেন, আমার বাবা কৃষি কাজ করতো। বাবার পাশাপাশি নিজেও প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাইতাম। মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি পেয়ে সব মিলিয়ে অনেক ভালো লাগছে।

রোকসানা বলেন, আমার বাবা ওয়ালের মিস্ত্রি শ্রমিকের কাজ করতো। বাবা কষ্ট করে আমার লেখাপড়ার খরচ চালাতো। আমি পুলিশের চাকরি করে দেশ ও মানুষের সেবা করতে চাই। মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়াতে চাই।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, কঠোর পরিশ্রমের পর একদম স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। লিখিত ও ভাইভা শেষে ৫০ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি মেধা অনুযায়ী অপেক্ষমাণ ১০ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। শতভাগ স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের চাকরি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে মেডিকেল পরীক্ষার পর তাদের ট্রেনিং করার জন্য নির্ধারিত পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে পাঠানো হবে। আশা করি নতুন সদস্যরা পেশাদারত্বের সাথে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *