
নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ছাত্র শিক্ষক পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার, ৩১ আগস্ট বিকেলে টাঙ্গাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স কার্যালয়ে জেলা শাখার আয়োজনে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ছাত্র শিক্ষক পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স জেলা শাখার সভাপতি কাজী জাকেরুল মওলা। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক ভিপি মো. আব্দুল কাদের, টাঙ্গাইল জেলার আইডিইবির সাধারণ সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হোসেন চুন্নু, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জাহিদ রানা, প্রচার সম্পাদক মির মহাসিনউদ্দিন আকাশ, গোপালপুর এলজিডি উপজেলা প্রকৌশলী মো. মশিউল ইসলাম খান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নুরুজ্জামান, সহকারি প্রকৌশলী মো. রায়হান মিয়া, উপ সহকারি প্রকৌশলী স্বপন চন্দ্র দাস প্রমুখ।
এ সময় তারা বুয়েট শিক্ষার্থীদের তিন দফার আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা সভায় তারা ৭ দফা দাবিসমূহ তুলে ধরেন।
দাবিসমূহ হল- ১) প্রকৌশল কর্মক্ষেত্র ডেস্ক ও ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভাগ করে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র নির্ধারণ এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ১০ম গ্রেডভুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী/সমমান পদ শুধুমাত্র বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর আওতাধীন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে উত্তীর্ণ ৪ বছর মেয়াদি (সার্ভেয়িংসহ সকল টেকনোলজি) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণের জন্য সংরক্ষণ অব্যাহত রাখতে হবে।
২) সরকারি আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রকৌশল সংস্থা, বিভাগ ও বিদ্যুৎ কোম্পানির জনবল কাঠামোতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের হার ১:৫ করা। যা বর্তমানে অশুভ চক্রের কারণে ৫:১ এ রূপান্তরিত করার পাঁয়তারা চলছে।
৩) সকল প্রকৌশল সংস্থায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী হতে সহকারী প্রকৌশলী পদে বিদ্যমান ৩৩% পদোন্নতির বিধান ৫০% এ উন্নীতকরণ এবং সকল প্রকৌশল সংস্থায় প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডার হতে নিয়োগ প্রদান করা।
৪) মেধার অপচয় রোধে প্রকৌশলীদের কারিগরি ক্যাডার ব্যতিত অন্য ক্যাডারে নিয়োগ বন্ধসহ প্রকৌশল পেশা পরিবর্তন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
৫) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রমের গুণগত মান রক্ষার্থে কোর্স কারিকুলাম ইংরেজিতে প্রণয়নসহ আধুনিকায়ন করা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আনুপাতিক হার ১:১২ নিশ্চিত করে শিক্ষক স্বল্পতা দূরীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। সকল কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ল্যাব/ওয়ার্কসপ আধুনিকায়ন এবং কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সংযুক্ত এসএসসি ভোকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইন্সট্রাক্টরকে সহকারী প্রধান শিক্ষক (কারিগরি) হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে হবে। বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের ও সংযুক্ত এসএসসি (ভোকেশনাল), দাখিল (ভোকেশনাল) কোর্সে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্টের কাচাঁমাল, শিক্ষার্থী ভাতা ও প্রশিক্ষক ভাতা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বরাদ্দ দিতে হবে।
৬) আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।
৭) কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ কর্তৃক উত্থাপিত ৬ দফা দাবী বাস্তবায়নসহ সকল প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ক্রেডিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং সনদধারীদের ভর্তির সুযোগ প্রদান করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নবম গ্রেড সহকারী প্রকৌশলী পদে কেবল পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ ও ন্যূনতম যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার করা। দশম গ্রেডে শুধু ডিপ্লোমাধারীরা আবেদন করতে পারেন, সেখানে যেন উচ্চ ডিগ্রিধারীরাও আবেদন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা। শুধু বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং যারা সম্পন্ন করবেন, তারাই যেন প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) লিখতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।
এই তিনটি দাবী নিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকার শাহবাগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচিতে বুয়েটের পাশাপাশি যোগ দেন আরও কয়েকটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। পরে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যেতে চাইলে টিয়ার শেল, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় পুলিশ। শিক্ষার্থী-পুলিশ মুখোমুখি অবস্থানে বেশ কয়েকজন আহত হন।