টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণকাজ ১০ বছরেও শেষ হয়নি

অর্থনীতি টাঙ্গাইল সদর পরিবেশ প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলে নতুন বাস টার্মিনালে পুরাতন কাঁচা বাজার ভেঙে প্রায় দশ বছর আগে বহুমুখী বাণিজ্যিক ভবন ‘বিবর্তন’-এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের তিনগুণ বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি ভবনের নির্মাণকাজ। দোকানের পজিশন বরাদ্দ নেওয়া গ্রাহকরা দীর্ঘ প্রতীক্ষা করছেন। দ্রুত সময়ে পজিশন হস্তান্তরের দাবি তুলেছেন তারা। এ ছাড়া, গ্রাহকরা দোকানের আয়তন নকশার তুলনায় ছোট করা এবং সিরিয়াল উল্টাপাল্টা করার অভিযোগও করেছেন।

 

২০১৫ সালের ১ এপ্রিল এই বহুমুখী বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাণকাজের ওয়ার্ক অর্ডার হয়। কাজ শেষ করার নির্ধারিত সময় ছিল ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে দোকানের পজিশন বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৩ সালেই। টাঙ্গাইল নতুন বাস টার্মিনালে সোনিয়া নার্সিং হোম ভবন-১-এর পাশে ৬০ শতাংশ জমিতে ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল নকশায় ১০ তলা ভবনের পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমানে ৬ তলা পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে। এখানে মোট ৪২৪টি দোকানের পজিশন রয়েছে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৬২টি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতি বর্গফুট ৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ভিন্ন ভিন্ন দামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

‘বিবর্তন’ ভবনে দোকানের পজিশন কিনেছেন নাগরপুর জনতা ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক শেখ ফরিদ। তার দোকানের সিরিয়াল নম্বর গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৩২। ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি দোকানের পজিশন বরাদ্দ নেন। তিনি জানান, লটারির মাধ্যমে জেলা পরিষদ থেকে দোকানগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। সে সময় বলা হয়েছিল দোকানগুলো ভালো মানের হবে, এখানে ভালো ব্যবসা হবে। এসব শুনে কষ্টার্জিত টাকা ইনভেস্ট করেছি। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের তিন-চারগুণ সময় পেরিয়ে গেলেও দোকানের পজিশন হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে বিনিয়োগের কোনো সুফল পাইনি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, দায়িত্বশীলদের অবহেলার কারণেই শত শত দোকানদারের স্বপ্ন ভেস্তে গেছে।

আরেক ভুক্তভোগী মদন মোহন শীল মুক্তি, যার দোকানের পজিশন ২য় তলায় ৩৫৮ নম্বরে। তিনি জানান, নকশায় তার দোকানের আয়তন ৯৫ বর্গফুট থাকলেও নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে দেখা যায় মাত্র ৮০ বর্গফুট।

 

পূর্বের টাঙ্গাইল বাস টার্মিনালের পুরাতন সুপার মার্কেটে ২৬টি দোকান ছিল। এর মধ্যে কোদালিয়া এলাকার ধলা মিয়ার ছেলে মো. শফিকুল ইসলামের একটি দোকান ছিল (দোকান নং ১৬)। তার ছেলে মো. সোহেল সিকদার জানান, আমার বাবা নির্দিষ্ট পরিমাণ অগ্রিম জামানত দিয়ে দোকান বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। নিয়মিত ভাড়াও দিয়েছেন। কিন্তু বিনা নোটিশে দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। পরবর্তীতে দোকান দেওয়ার কোনো ব্যবস্থাও করা হয়নি। তিনি পূর্বে যাদের দোকান ছিল, তাদের পুনরায় দোকান দেওয়ার দাবি জানান।

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না জানান, ‘আমি অল্প কিছুদিন আগে জেলা পরিষদে যোগদান করেছি। যেখানে ভবনটি নির্মাণ হচ্ছে সেখানে পুরাতন স্থাপনা এবং বিদ্যুৎ-গ্যাসের লাইন অপসারণ করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। এ ছাড়া দোকান বরাদ্দের সেলামির টাকা সময়মতো জমা না হওয়া এবং করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় কাজ দেরিতে সম্পন্ন হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যে গতিতে কাজ চলছে, আশা করা যায় আগামী তিন মাসের মধ্যে ভবনের তিন তলা পর্যন্ত হস্তান্তর করা যাবে। পূর্বে যাদের দোকান ছিল তাদের বিষয়ে অফিসিয়ালি কোনো লিখিত কাগজপত্র পাইনি। যদি বৈধ কাগজপত্র থাকে তবে তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *