মাদকবিরোধী অভিযানে অর্থ লুটে বহিস্কৃত সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের ভাই!

অপরাধ আইন আদালত টাঙ্গাইল সদর পরিবেশ প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভূঞাপুর উপজেলার বাহাদিপুর এলাকায় অভিযানে গিয়ে এক মাদক বিক্রেতার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৩ কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার, ৮ জুলাই রাত ১০টার দিকে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন- টাঙ্গাইল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম, উপপরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান।

 

এর আগে গতকাল সোমবার রাতে এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৩ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রধান কার্যালয়ে সংযুক্ত করার ঘোষণা দেয়া হয়। বহিস্কৃতদের মধ্যে মো. জিয়াউর রহমান পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান (ডিবি) হারুনের আপন ছোট ভাই।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর ডিবি হারুনের ভাই মো. জিয়াউর রহমান টাঙ্গাইলের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী উপ-পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন। জিয়াউর রহমান ডিবি হারুনের ছোট ভাই।

জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস সহকারী উপ-পরিদর্শক শামীম আল আজাদকে আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় সংযুক্ত করা হলেও তিনি সেখানে যোগদান করেননি। আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় যোগদান না করায় আজ মঙ্গলবার শামীম আল আজাদকে জেলা অফিসের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।

সাবেক কাউন্সিলর ছালেহা বেগম অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও থানায় লিখিত অভিযোগ (জিডি) করেন। অভিযোগে তিনি বলেন, ‘‘গত ১৮ জুন সকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন আমার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করার প্রায় ৩ ঘন্টার অধিক সময় নাটকীয়ভাবে অভিযান চালিয়ে ১০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার দেখানো হয়। একপর্যায়ে তারা ঘরের আলমারির তালা খুলে সেখানে থাকা নগদ ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা নিয়ে নেন। আমার ছেলের ঘরে প্রবেশ করে ঘরের আসবাবপত্র এলোমেলো করে ও ঘরের আলমারির ড্রয়ারে থাকা নগদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেন। টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আমাকে ও আমার ছেলের স্ত্রীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। পরে জবানবন্দি ভিডিও রেকর্ড করা হয়।

ভুক্তভোগী ছালেহা বেগম বলেন, শামীম আল আজাদ টাকার জন্য আমাকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে। আমার হাত ধরে টানাহেচড়া করা হয়েছে। লাঠি দিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে। আমার সঙ্গে থাকা লুকানো টাকাও হাতিয়ে নেয় শামিম। শামিমের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি না হওয়ায় আমি হতাশ। আমি শামিমের কঠিন বিচার চাই। এছাড়াও আমি সাময়িক বহিষ্কারে খুশি নই। আমি তাদের উপযুক্ত বিচার চাই। একইসঙ্গে লুট হওয়া টাকা ফেরতেও দাবি করছি।

এ ব্যাপারে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, “অভিযানের নামে টাকা লুটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, গত ১৮ জুন ভূঞাপুরের বাহাদিপুর এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে ছালেহা বেগমের বাড়ি থেকে ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠায় এই অভিযোগটি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *