টাঙ্গাইলের ৫০ জন ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন

আইন আদালত টাঙ্গাইল সদর প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল জেলায় ১২০ টাকা করে আবেদনের পর প্রাথমিকভাবে পুলিশে চাকরি নিশ্চিত হয়েছেন ৫০ জন। বুধবার, ১৪ মে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনস গ্রিলশেডে ফলাফল প্রকাশ করেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলে নারী-পুরুষ মিলে দুই হাজার ৭৭১ জন আবেদন করেন। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষা দেন ৯৩৭ জন। পরে ১৮৬ জন ভাইভা দেন।

 

গোপালপুরের শিমলাপাড়া গ্রামের মেঘলা রানীর বাবা কাশীরাম দাস প্রায় দুই যুগ ধরে খাল-বিল, নদ-নদীসহ বিভিন্ন জায়গায় মাছ ধরেন। এতে কোনোরকম পাঁচ সদস্যের সংসার চলত মেঘলা রানীদের। অন্য সহপাঠীদের পরিবারের মতো সচ্ছলভাবে না চললেও মেঘলা রানী ছিল অনেক মেধাবী। ছোটবেলা থেকে পুলিশে চাকরি নিয়ে দেশের সেবা করার ইচ্ছাও ছিল প্রবল। অবশেষে বুধবার রাতে টাঙ্গাইলে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।

মেঘলা রানী বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি ১২০ টাকায় নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারব তা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। বর্তমান সময়েও যে ঘুস ছাড়া সরকারি চাকরি মিলে আমি তার দৃষ্টান্ত। আমিও বিনা স্বার্থে দেশের মানুষের সেবা করতে সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাই।

শুধু তার একার নয়, তার মতো ৫০ জন শতভাগ মেধা যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে টিআরসি পদের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। কোনোরকম সুপারিশ বা অর্থ লেনদেন ছাড়াই বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি পেয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য নরসিংদীর শিবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. রায়হান সরকার, মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন প্রমুখ।

নিয়োগপ্রাপ্তদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও মিষ্টি মুখ করান পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই কৃষক, দিনমজুরসহ হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান রয়েছে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ায় আনন্দিত সবাই। আবার অনেকেই ঘোষণা শোনে আনন্দে বুকফাটা কান্নাও করেন।

টাঙ্গাইল সদরের হুগড়া এলাকার নুর মোহাম্মদ বলেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা সচ্ছল নই। নিজেরাই পরিশ্রম করে এ পর্যন্ত এসেছি। যোগ্যতা ও সততা দিয়ে যে পুলিশে চাকরি পাব, তা কখনো কল্পনাও করি নাই। পরিবারের হাল ধরার পাশাপাশি দেশের স্বার্থে কাজ করতে চাই।

নন্দবালা গ্রামের আসলাম মিয়া বলেন, ঘুষ ছাড়া পুলিশের চাকরিটা পাওয়ায় আমি ও পরিবারের সদস্যরা খুব খুশি। দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই।

অপরজন মো. লিমন বলেন, ইতোপূর্বেও দুইবার পুলিশের মাঠে এসেছি। শেষধাপ থেকে ফিরে যেতে হয়েছে। তবে পুলিশের চাকরি পেয়ে খুব ভালো লাগছে।

কাশীরাম দাস বলেন, আমি খুব কষ্টে সংসার চালাতাম। আমার মেয়ে পুলিশের চাকরি পাওয়ায় আমার বুকটা আনন্দে ভরে গেছে। আমার মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।

নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা জানান, পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদের জন্য দুই হাজার ৭৭১ জন প্রার্থীকে প্রিলিমিনারি স্কিনিং শেষে বাছাই করা হয়। গত ৬ এপ্রিল শারীরিক মাপ ও কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য এক হাজার ৫৩৩ জনকে যোগ্য হিসেবে বিবেচিত করা হয়। ৭ ও ৮ এপ্রিল শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের ৯৪১ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষা জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়। ৪ মে ৯৩৭ জন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিলে সেখানে ১৮৬ জন উত্তীর্ণ হয়। তাদের মৌখিক পরীক্ষা শেষে ৪৫ পুরুষ ও ৫ নারীকে চূড়ান্ত ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও ১০ জনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, দক্ষ, মেধা ও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের খুঁজে বের করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া কার্যক্রম আমরা নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছি। কাজটি করতে পেরে নিজেদের অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, নিজেদের পেশাদারিত্ব, নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা দিয়ে। আগামীতে যারা আসবে, তারা যেন নৈতিকতা ও শারীরিক ফিটনেস এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে দেশের স্বার্থে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *