টাঙ্গাইলে শিশু যৌন নিপীড়নের সংবাদে বাঁধা প্রদানের অভিযোগ আইনজীবীর বিরুদ্ধে

অপরাধ টাঙ্গাইল সদর স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানিকগঞ্জে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে ৩ বছরের শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। সেই শিশু যৌন নিপীড়নের সংবাদ করতে গেলে বাঁধা দেন এডভোকেট চিত্তরঞ্জন দাস নুপুর।

সোমবার রাতে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে খোঁজ নিতে যান কয়েকটি মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এর সত্যতা পেয়ে সাংবাদিকরা ফেরার সময় আইনজীবী চিত্তরঞ্জন দাস নুপুর মুঠোফোনে ডিবিসি টে‌লি‌ভিশ‌নের সাংবা‌দিক সোহেল তালুকদারকে ফোন করে নিউজ না করতে চাপ প্রয়োগ করেন। এর আগে হযরত আলী নামে স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্মীকেও তিনি হুমকি দেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদি‌কে ঘটনার শাস্তি দাবি করলেও অস্বস্তি প্রকাশ করে সাংবাদিকদের সামনে আসেনি শিশুটির মা-বাবা। তারা সংবাদ প্রকাশেও অনীহা প্রকাশ করে জানায়, এর আগে গত শুক্রবার মানিকগঞ্জে বিয়ের দাওয়াতে গিয়ে ওই শিশু ১৪ বছরের এক স্কুল ছাত্রের মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। বিষয়টি ওই শিশুর মা টের পেয়ে টাঙ্গাইল চলে আসেন। রোববার শিশুটিকে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে শিশুকে চিকিৎসক দেখার পর সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে শিশুটিকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।

শিশুরটি মা ক্যামেরার সাম‌নে কথা না বল‌লেও তি‌নি জানান, বি‌য়ের অনুষ্ঠা‌নের রাতে শিশু‌টি‌র সা‌থে অন্যায় কাজ করা হয়। প‌রে মে‌য়ে আমা‌কে জানায় সে গোপনা‌ঙ্গে ব্যথা অনুভব কর‌ছে। প‌রে ঘটনার বিস্তা‌রিত জান‌তে পা‌রি আমার মে‌য়ের সা‌থে আমা‌দেরই আত্মীয়ের ১৩ বছ‌রের এক‌টি ‌ছেলে খারাপ কাজ ক‌রে‌ছে। এ বিষয়‌টি নিয়ে পা‌রি‌বা‌রিকভা‌বেও অশান্তি‌তে আছি।

ডি‌বি‌সি টে‌লি‌ভিশ‌নের সাংবা‌দিক সো‌হেল তালুকদার ব‌লেন, বিজ্ঞ আইনজী‌বী ধর্ষকের প‌ক্ষে একজন গণমাধ্যমকর্মী‌কে সংবাদ না করার জন্য হুম‌কি দি‌তে পা‌রেন এটাই বি‌ষ্মিত ক‌রে‌ছে। তি‌নি এই ঘটনা মিমাংসা কর‌তে পা‌রেন কিনা এমন কথায় ওই আইনজী‌বী ব‌লেন, আদাল‌তের জজ ও পু‌লিশ সুপা‌রের সা‌থে কথা বলে সমাধান কর‌বেন তি‌নি।

গণমাধ্যম কর্মী হযরত আলী বলেন, এই ঘটনাটি জানার পর আমি ভূক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলি। তখন তারা আমার কাছে ঘটনাটি স্বীকার করেন। এসময় ভূক্তভোগী ওই শিশুর মা আমার কাছে বলেন, ছেলের পরিবার আমার স্বামীকে হুমকি দিচ্ছে। এর পর পরই ওই আইনজীবী নুপুর বাবু আমাকে ফোন করে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকেন।

অভিযুক্ত পরিবারের পক্ষে এডভোকেট চিত্তরঞ্জন দাস নুপুর বলেন, তিন বছরের শিশু যৌন নির্যাতনকারী ৭ম শ্রেণীর ছাত্র প্রণবের বাবা উজ্জ্বল এই বিষয়ে সংবাদ না করার জন্য সংবাদ না করার জন্য বলেন। এ সময় তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি মিমাংসা করে নেব। এছাড়াও প্রণবের মা তার ছেলের মানিকগঞ্জ ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথাও স্বীকার করেন।

মোবাইল ফোনে আইনজীবী চিত্তরঞ্জন দাস নুপুর বলেন, নারী শিশু কোর্টের বিচারক অথবা টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারকে বলে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে। কোন মামলা যাতে না হয়, সেই বিষয়টিও আমি দেখছি। বিষয়টি এতো সহজে মীমাংসা করা যায় কিনা উল্টো প্রশ্ন করলে তিনি বিভিন্ন আইন দেখানোর চেষ্টা করেন।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে দা‌য়িত্বরত নার্সরা জানায়, শিশুটির সা‌থে খুবই অন্যায় করা হ‌য়ে‌ছে। ধর্ষণের আলামত সংগ্রহের জন্য সোয়াব টেষ্ট করা হ‌য়ে‌ছে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাধায়ক ডা. সা‌দিকুর রহমান জানান, গোপানা‌ঙ্গের বাইরে আঘা‌তের চিহ্ন পাওয়া গে‌ছে। ‌প্রাথ‌মিকভাবে এটি‌কে ধর্ষণের চেষ্টা হ‌য়ে‌ছে ব‌লে ম‌নে হ‌চ্ছে। সোয়াব টেষ্ট করা হ‌য়ে‌ছে। সে‌টির রি‌পোর্ট পাওয়া গে‌লে বিস্তা‌রিত তথ্য জানা যা‌বে।

উল্লেখ্য, আইনজীবী চিত্তরঞ্জন দাস নুপুর সরকারি সাদৎ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের দুইবারের নির্বাচিত জিএস, টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল টাঙ্গাইল জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বর্তমানে টাঙ্গাইল জজ কোর্টের আইনজীবী ও অ্যাড. মো. আব্দুস সালাম পিন্টু মু্ক্তি পরিষদের আহবায়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *