ঘাটাইল প্রতিনিধি: ঘাটাইল উপজেলার কদমতলী হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে গরু-ছাগলের হাট চলায় বিদ্যালয়ে ক্লাস পরিচালনার পরিবেশ নেই। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কের পাশে গরু-ছাগলবাহী ট্রাক-পিকআপ দাঁড় করে রাখায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক যান চলাচল। ক্রেতা-বিক্রেতায় আনাগোনায় গত ৩৭ বছর ধরে প্রতি রোববার বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গরু-ছাগলের হাটে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ১৯৭২ সালে কদমতলী হাসান পাবলিক হাই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৪ বছর পর ১৯৮৬ সালে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বিদ্যালয়ের মাঠে প্রতি রবিবার পশুর হাট বসানোর উদ্যোগ নেন। শুরুতে হাটের বিস্তৃতি ছোট থাকলে ধীরে ধীরে এর ব্যাপ্তি বাড়ে। প্রথম দিকে মাঠের এক কোণে হাট বসলেও ৩৭ বছরে জেলার অন্যতম বড় পশুর হাটে পরিণত হয়। বর্তমানে হাটের কারণে বিদ্যালয়ের লেখাপাড়ার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের আশপাশের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, রবিবার হাটের কারণে বিদ্যালয়ের ক্লাস সকাল আটটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত চলে। তারপর হাট বসে। আসলে ওই দিন নামমাত্র বিদ্যালয় চলে। হাটের পর দেখা যায়, পুরো বিদ্যালয় গোবরসহ আবর্জনায় ভরে থাকে। শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধূলাও করতে পারে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহাজন আলী বলেন, বর্তমানে তাঁদের বিদ্যালয়ে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। হাটের কারণে স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশও ব্যাহত হয়, সেটা তিনি মানতে চাননি। তবে হাট স্থানান্তর হোক, এটা তিনি চান। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। তিনি বলেন, হাট থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ যে টাকা পান, তা বলার মতো নয়।
রবিবার সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয় মাঠের আধা কিলোমিটার আগে থেকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট। বিদ্যালয়টি সীমানাপ্রাচীরে ঘেরা এবং বিদ্যালয়ের সুদৃশ্য তোরণের পাশেই মাটির উঁচু ঢিবি। ঢিবির সামনে গরু-ছাগলবাহী ট্রাক-পিকআপ থেমে ঢিবির ওপর গরু-ছাগল নামানো হচ্ছে। বিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে সহস্রাধিক গরু-ছাগল বাঁধা। মাঠজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে গোবর। ক্রেতা-বিক্রেতার হট্টগোলে ভরে আছে পুরো মাঠ।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক জানান, প্রতি হাটবারে বিদ্যালয়টির মাঠে এমন দৃশ্য তৈরি হয়। হাটের পরের দিন পুরো মাঠ দুর্গন্ধে ভরে যায়। শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে অসুবিধা হয়।
জামালপুর থেকে উত্তরবঙ্গগামী বাসের চালক রঞ্জু মিয়া বলেন, ব্যস্ত রাস্তার পাশে মাঠের মধ্যে হাট বসে এবং রাস্তার পাশে পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে রাখা হয়। এ ছাড়া ট্রাকে পশু ওঠানো-নামানোর কাজ চলে। এতে প্রতি রবিবার দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ রাস্তায় যানজট লেগে থাকায় আমাদের চলাচলে সমস্যা হয়।
চলতি বছর হাটটির ইজারাদার ইজ্জত আলী বলেন, স্কুলমাঠে ৩৭ বছর ধরে এখানে হাট চলছে। এবারই প্রথম আমি হাটের ইজারা নিয়েছি। ইজারা বাবদ ভ্যাটসহ ২৫ লাখ টাকা দিয়েছি।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, একটি প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের মাঠে বছরের পর বছর কীভাবে পশুর হাট চলে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। হাটটি যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে অন্যত্র স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এর জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ঘাটাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে ইতিপূর্বে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন। হাটের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে বলে স্বীকার করেন। তিনি জানান, মূল ক্যাম্পাসের বাইরেও ওই বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জায়গা আছে। সেখানে মাটি ভরাট করে হাটটি স্থানান্তরের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে বিদ্যালয়ের নিচু জমিটি মাটি ভরাট করে দেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়েছে।