মির্জাপুরে ঝিনাই নদীর ভাঙন অব্যাহত:

মির্জাপুরে ঝিনাই নদীর ভাঙন অব্যাহত: বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ

ফিচার মির্জাপুর

মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ফতেপুর এলাকায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঝিনাই নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে অর্ধশতাধিক বাড়ি এই ভাঙনের কবলে পড়েছে। এছাড়াও কুরণী-ফতেপুর পাকা সড়কটি ভেঙে উপজেলা সদরের সঙ্গে ওই এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

 

জানা যায়, নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলায় উত্তর মির্জাপুরের একমাত্র যোগাযোগ রাস্তা কুরণী ফতেপুর সড়কের ফতেপুর বাজার সংলগ্ন প্রায় ৩০০ ফুট নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে বৃহস্পতিবার ২২ জুন সকাল থেকে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে এলাকার লোকজন হেঁটে ভাঙা অংশের পাশ দিয়ে চলাচল করছেন। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকার লোকজন।

 

এলাকাবাসী জানান, গত কয়েকদিন ধরে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ফতেপুর এলাকার ঝিনাই নদীর তীরবর্তী ফতেপুর পালপাড়া, এক টাকার বাজার, বানকাটা, থলপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি ফতেপুর পালপাড়া ও বানকাটা এলাকায়। এরইমধ্যে ওই এলাকার ৫-৬টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

 

গত তিন বছরে বানকাটা এলাকার প্রায় ৩০-৩৫টি বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। এছাড়া অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙনের মুখে পড়ায় ওইসব এলাকার ঘরগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ।

ঝিনাই নদীর এই ভাঙনে এক টাকার বাজার এলাকায় কুরণী-ফতেপুর পাকা সড়কটির বেশ কিছু অংশ ভেঙে গেছে। ফলে উপজেলা সদরের সঙ্গে ভাঙন কবলিত এলাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই অংশের লোকজন বিকল্প হিলড়া-আদাবড়ি সড়ক দিয়ে চলাচল করছেন বলে জানা গেছে।

 

এলাকাবাসী জানান, গত ১৪ মে মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে বংশাই নদীর বিভিন্ন স্থানে লাগানো ৮টি ড্রেজার মেশিন ভেঙে দেন। তারপরও ফতেপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আব্দুর রউফ মিয়ার দুটি ড্রেজারসহ সোহেল মির্জা একটি ড্রেজার দিয়ে রাতে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন।

এ ব্যাপারে ফতেপুর বাজারের ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতা ইব্রাহীম সিকদার বলেন, ভাঙন কবলিত ওই এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে এরআগে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

নদীভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পালপাড়া গ্রামের ৭০ বছর বয়সী মিনু রানী পাল বলেন, আমরা পাল বংশের মানুষ। পালেরা মইরা যাক, কার কী আসে যায়? নদী থ্যাইকে মেশিন দিয়ে বালু তোলে, মানা করলে মারতে আসে, মামলার ভয় দেখায়। এখন রাস্তার সঙ্গে আমাদের বাড়িঘরও নদীতে যাইতাছে। আমাগো দেখার কেউ নাই। আমাগো যাওয়ারও জায়গা নাই।

ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, নদী ভাঙনের খবর পেয়েছি এবং সরেজমিনে দেখে আমি আমাদের এমপি মহোদয় খান আহমেদ শুভর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নদীর পাড় ভাঙনরোধে উপজেলা প্রশসানের নির্দেশেই নদীর পূর্বপাড় থেকে বালু উত্তোলন করা হয়।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাত হোসেনে জানান, তিনি ভাঙনের বিষয়টি জেনেছেন। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাজ করতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তবে ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রয়োজনীয় পদক্ষে গ্রহণ করতে প্রকৌশলী পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *