মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুরে যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর শাখা বংশাই নদীতে অবৈধ ড্রেজারযুক্ত বালু ভর্তি ভলগেট পরিবহনে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনের কোন প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে নিজেদের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, ফসলি জমি, হাট বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষার্থে ভলগেট বন্ধ করতে পাহাড়া দিয়ে যাচ্ছে গোড়াইল, চাকলেশ্বর, কুমারজানি, ফতেপুর, পুষ্টকামুরী এলাকার লোকজন। তারা এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানিয়েছে।
যখনই কোন অবৈধ বালু ভর্তি ট্রলার আসে, তখনই তা ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে এলাকাবাসী। যেকোন সময় ঘটতে পারে মারামারিসহ আরও বড় ধরনের দূর্ঘটনা। পক্ষান্তরে সিন্ডিকেট বালু ব্যবসায়ীরা তাদের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে নিরীহ মানুষেকে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কতিপয় প্রভাবশালীদের মদদে দীর্ঘদিন যাবৎ বালু ব্যবসায়ী একটি সিন্ডিকেট বালু ব্যবসা পরিচালনা করছে। সংঘবদ্ধ এ চক্রটির কারণে ক্ষমতাসীন দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। জীবনের ভয়ে এদের বিরোদ্ধে কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। ভলগেট ভর্তি বালু ব্যবসায়ীদের নিষেধ করলে পুলিশ, ডিবি, র্যাব ও মামলার ভয় দেখায় বলে জানা গেছে।
মির্জাপুর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, বালু ব্যবসায়ী কবির সিকদার কয়েকজন লোকজন নিয়ে মাটির ট্রলার নিয়ে যাচ্ছিল। এলাকার মানুষের কাছে জানতে পেরেছি তারা আট-দশটি ভলগেট পরিবহনে অবৈধ বালু নিয়ে দ্রুত গতিতে চলাচলের কারনে এলাকার ঘরবাড়ির পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। তাদের বসতবাড়ি রক্ষার জন্য ভলগেট পরিবহন চলাচলে বাধা দিচ্ছে। এতে যে কোন সময় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।
ভলগেট চালক ও শ্রমিক মিলন, আঃ ছবুর, মোঃ রজব বলেন, আমরা এই বালু বাসাইল থেকে লোড দিয়েছি। হাটুভাঙ্গার কবির সিকদারের মাধ্যমে কালিয়কৈর যাবে।
এ ব্যাপারে কবির সিকদার বলেন, আমি কোন ভলগেটের বালুর বিষয়ে জানি না। এমনকি আমি এ ব্যবসার সাথে জড়িত না।
পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর রওশনারা বেগম, ভাদগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, আজগানা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিক সিকদার জানান, আমাদের মির্জাপুর উপজেলার বংশাই নদীতে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এ বছর ভাঙ্গনের মাত্রা ব্যাপক আকার ধারন করছে। শুকনো ঋতুতে মাটিখেকোদের নদীর চরের মাটি কেটে বিক্রি আর বর্ষা মৌসুমে বংশাই নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথেই ডেজারযুক্ত ট্রলার নদীর বিভিন্ন স্থান হতে বালু উত্তোলন করে দ্রুতগতিতে অবৈধ বালু ভর্তি ট্রলার পরিবহন করে। এ কারনে তীব্র নদী ভাঙ্গনে রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা এবং পৌরসভার একাব্বর হোসেন এমপি সেতু হুমকির মুখে রয়েছে।
সেতুর পূর্বপাশে ঘরবাড়িগুলো নদী ভাঙ্গনের ফলে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে ভূক্তভোগি পৌর কাউন্সিলর প্রাথী মোঃ মজনু মিয়া (৪৫), আব্দুল খালেক (৬৫), বেগম (৫২), কদভানু (৬০), সুলতান (৬৭) এবং গাড়াইল, চাকেলেশ্বর, পুস্টকামুরী এলাকার বৈরি দাস, ঠাকুর মাস্টার, কার্তিক সাধু, পংকজ মাস্টার, দ্বিলীপ, গোপাল, হাবেল মৃধা, আমিনুর মিয়া, হিরো মৃধা, আশ্রাব মৃধা, সুলতান মিয়া, সোহেল দেওয়ানসহ আরও অর্ধ শতাধিক পরিবার। তাদের অভিযোগ তাদের ঘরবাড়ির জায়গা জমি প্রতি বছর বংশাই নদীর গ্রাস করেই যাচ্ছে কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি।
তাই ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য অবৈধ বালু ভর্তি ট্রলার পরিবহন বন্ধ করে অতি শিঘ্রই জিও ব্যাগ স্থাপন করে বাধ নির্মাণ করে ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পেতে সরকারের নিকট সাংবাদিকদের মাধ্যমে আবেদন জনিয়েছেন। একাধিক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার অভিযোগ করেছেন, নদী ভাঙ্গনে লাখ লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্থ হলেও প্রশাসন থেকে তারা কোন সহায়তা পাননি। বিগত দিনে অবৈধ বালু ভর্তি ভলগেট পরিবহন বন্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি।
এতে পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি এলাকাবাসীর ফসলি জমি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে আশেপাশের বসবাসকারী বাড়িঘরগুলো।
তারা আরো জানান, প্রতিবছর ভরা বন্যা মৌসুমে এই চক্রটি ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ভলগেট পরিবহনের মাধ্যমে বালু বিক্রি করে। ফলে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। বহু লোকজন ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এসব বালু ভর্তি ভলগেট পরিবহন বন্ধের করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।
নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ কয়েক হাজার পরিবার দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরছেন এমনকি উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করছেন। এ প্রসঙ্গে থলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম খান বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি এবং কমা দুটোই আমাদের জন্য আতঙ্ক। এই দুই সময়েই আমাদের এলাকায় তীব্র নদীভাঙন শুরু হয়। আমরা বংশাই নদীর ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী সমাধান চাই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাত হোসেন বলেন, মির্জাপুর পৌরসভার কুমুরজানি এলাকার বংশাই নদীতে অবস্থিত আলহাজ একাব্বর হোসেন এমপি সেতুর পূর্বপাশের ঘরবাড়িগুলো ব্যপক ভাঙ্গনের বিষয়টি আমি জানি। কোন কারনে অসহায় পরিবারের ক্ষতি হয়, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ববস্থা গ্রহন করা হবে।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, বংশাই নদী দিয়ে বালু ভর্তি ভলগেট পরিবহনের বিষয়টি আমি শুনেছি। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।