
নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল-আরিচা মহাসড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য রাস্তার পাশের ২ হাজার ৩৭৯টি গাছ কাটা পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে আম, জাম, কাঠাল, মেহগনি ও বটসহ অসংখ্য শতবর্ষী প্রাচীন ফলদ ও বনজ গাছ। ইতোমধ্যে এর বেশকিছু গাছ কেটে ফেলা শেষ হয়েছে এবং বাকিগুলোও কাটা চলছে।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানায়, মহাসড়কে ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে মানিকগঞ্জ থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ৫৯.৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩৩ ফুট প্রশস্ত মহাসড়ক উন্নীতকরণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। যার মধ্যে টাঙ্গাইল অংশের দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার এবং মানিকগঞ্জ অংশের দৈর্ঘ্য ১৮.৫০ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের আওতায় সড়কটি ১৮ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৩৪ ফুট প্রশস্ত করা হবে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল হোসেন জানান, মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে এবং এই কাজের জন্য গাছগুলো কাটা হচ্ছে। বৃক্ষপালন বিভাগ ইতোমধ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করেছে।
এ বিষয়ে বৃক্ষপালন বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মুকুট আবু সাঈদ বলেন, মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেলদুয়ার-লাউহাটি-সাটুরিয়া সড়কে কাটা হচ্ছে ১ হাজার ৩৭০টি গাছ। এগুলোর জরিপ মূল্য ধরা হয়েছিলো ১৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। আর টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়।
অপরদিকে একই প্রকল্পের আওতায় আরিচা-ঘিওর-দৌলতপুর–নাগরপুর সড়কে কাটা হচ্ছে ১ হাজার ৯টি গাছ। এগুলোর জরিপ মূল্য ধরা হয়েছিলো ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। সড়ক প্রশস্ত করার পর পুনরায় দুই পাশে গাছ লাগানো হবে।
সরজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল শহরের কাগমারী মোড় থেকে শ্মশান ঘাট পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে গাছ কাটা চলছে। স্থানীয়রা জানান, সন্তোষ জমিদার আমলে নিঃসন্তান কোকা মালি এই গাছগুলোকে রোপন ও নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করেছিলেন। পরবর্তীতে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীও গাছগুলোকে সন্তানের মতো করে দেখভাল করেছেন। কেটে ফেলা গাছগুলোর মধ্যে শতবর্ষী আম, মেহগনি ও বট গাছও রয়েছে।
কাগমারী এলাকায় সন্তোষ ঘোষ পাড়ার মনা সরকার বলেন, এ গাছগুলো বছরের পর বছর পথচারীদের ছায়া দিচ্ছে। রাস্তাটি শীতল থাকে এ গাছগুলোর জন্য। এর মধ্যে নানান প্রজাতির পাখিও বসে। রাস্তাটি একদিকে প্রশস্ত করলে দুই দিকের গাছ কাটা পড়ত না। এতে উন্নয়নও হতো, পরিবেশের ক্ষতিও হতো কম।
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ পৃথিবীর সাধারণ সম্পাদক শহীদ মাহমুদ জানান, সড়ক বিভাগ একটু সচেতন হলে অনেক পুরোনো গাছ রক্ষা করা সম্ভব হতো। এ দাবিতে তাঁরা আন্দোলন শুরু করবেন বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি, স্থানীয় বাসিন্দা আজাদ খান ভাসানী বলেন, উন্নয়নের বলিতে কাটা পড়া গাছগুলোর মধ্যে জমিদারী আমলের বহু প্রাচীন গাছ রয়েছে। গাছগুলো দীর্ঘকাল মানুষকে বন্ধুর মতো সুমিষ্ট ফল এবং সুশীতল ছায়া দিয়ে আসছিল। ভবিষ্যত প্রজন্ম এই পুরোনো গাছগুলো আর দেখতে পাবে না। মনে হয় যেন গাছই আমাদের উন্নয়নের প্রধান শত্রু। তাই গাছ কাটা যায় অনায়াসে। কারও কোনো বিকল্প ভাবনা নেই, প্রতিবাদ নেই।
তিনি আরও বলেন, সময়ের সাথে তাপমাত্রা যে পরিমাণ বাড়ছে তাতে দেশ যে ক্রমশ মরুকরণের দিকে যাচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অপরদিকে নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। সুতরাং পরিবেশের স্বার্থে ভবিষ্যতে যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গাছ রেখেই যাতে বাস্তবায়ন করা যায় সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সচেষ্ট থাকতে হবে।