নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের প্রতিটি উপজেলায় চলতি মৌসুমে আগাম ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। একদিকে তাপদাহ অন্যদিকে অতিরিক্ত গরমে কৃষকদের কষ্ট হলেও ধান কেটে মাড়াই করছেন তারা। পাশাপাশি বসে নেই কৃষাণীরাও। তারাও মনের আনন্দে ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজে সহযোগিতা করছেন। আগাম বোরো ধান কাটা শুরু হলেও আগামী সপ্তাহে পুরো দমে ধান কাটা শুরু হবে বলে জানান কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে জেলায় কৃষকরা রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাল চাষ দিয়ে বোরো ধান আবাদ করেন। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে কৃষকরা জমিতে সঠিক সময় পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। এছাড়া কৃষি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে থেকে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ প্রদান করেন। তাছাড়া পর্যাপ্ত সার পাওয়ায় কৃষকদের তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সর্বত্রই বোরো ধানের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
জেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে টাঙ্গাইল জেলায় ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ২ শত হেক্টর জমিতে বোরো ধান অর্জিত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৬ শত হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান।
জেলায় বি-আর ২৮, ২৯, ৭৪, ৮৯, ৯২, হীরা, হাইব্রিড ৭৫, ৮১, ৯১, সবুজ সাথীসহ বিভিন্ন প্রজাতির উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করা হয়। এদিকে হঠাৎ কিছু কিছু এলাকায় বিআর ২৮ ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ উপেক্ষা এবং কৃষকদের উদাসিনতায় কিছু জমির ধান ক্ষতি হয়েছে। এরপরও কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
ঘাটাইল উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের কৃষক কুরবান আলী জানান, রোদ বৃষ্টি ভিজে দিন রাত পরিশ্রম করে এ মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়। সময় মতো পানি, বীজ, সার পাওয়ায় ও সঠিকভাবে জমির পরিচর্যা করায় ধানের ফলন ভালো ফলন হয়। ১ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাকি ধান কাটা শেষ হবে।
ধলাপাড়া ইউনিয়নের কৃষক মজিদ মিয়া জানান, এ মৌসুমে তিনি ১০ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ করেন। তবে এ মৌসুমে সার, বীজ, কীটনাশক ও ডিজেলসহ সবকিছুই বেশি দামে কিনতে হওয়ায় আবাদে তার খরচ বেশি হয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার তার জমিতে ভালো ধান হয়েছে। তবে কিছু জমিতে ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করায় কিছু ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি আগাম জাতের ২ বিঘা জমির ধান কেটেছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে যদি ধান কাটা শেষ করতে পারেন তাহলে তিনি লাভবান হবেন।
ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে সরকারিভাবে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এ উপজেলায় অনেক কৃষককে উফসী ধানের বীজ, ডিএপি সার ও এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। ফলন বৃদ্ধিতে মাঠপর্যায়ে থেকে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়। উপজেলার কিছু বোরো ধানের জমিতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে কিছু ক্ষতি হয়েছে। তারপরও এবার উপজেলার সর্বত্রই বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে।’
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের উপপরিচালক কৃষিবিদ আহসানুল বাসার বলেন, টাঙ্গাইলে ব্লাস্ট রোগে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। গতবছরের চেয়ে চলতি বছর বোরোতে বেশী ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।