নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে সীমান্ত সরকার পরিমল (৪৭) নামে এক ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেছেন। তিনি পৌর শহরের প্যারাডাইসপাড়ার প্রয়াত পলান সরকারের ছেলে। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সদর উপজেলার ঘারিন্দা রেলস্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, পরকীয়ার জেরে স্ত্রীর সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হতো। এর জেরে তিন বছর আগে দুই সন্তান নিয়ে পরিমলের স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যান। এছাড়া তিনি ঋণগ্রস্তও ছিলেন।
ঘারিন্দার স্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার আব্দুল আলিম জানান, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ট্রেনটি ঘারিন্দা স্টেশনে পৌঁছায়। পাঁচ মিনিটি যাত্রাবিরতির পর ট্রেনটি ঢাকা অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। এসময় স্টেশন থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে গিয়ে সীমান্ত সরকার পরিমল ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, পরিমলের টাঙ্গাইল শহরের ছয়আনি বাজারে ‘সীমান্ত সুইটস’ নামে একটি দোকান রয়েছে। দীর্ঘদিন তিনি সেখানে ব্যবসা করে আসছিলেন। কয়েক বছর আগে এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এ কারণে স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। এর জেরে প্রায় তিন বছর আগে তার স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান।
এদিকে, আত্মহত্যার আগে পরিমল নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে সীমান্ত সরকার পরিমল তার মৃত্যুর জন্য একজন নারী ও একজন পুরুষকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ে লোকসান হওয়ায় সম্প্রতি তিনি ধারদেনায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। কয়েকজন পাওনাদার তাকে টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন বলেও জানিয়েছেন পরিমলের পরিবারের সদস্যরা।
নিহতের পরিবার জানায়, মৃত্যুর আগে সীমান্ত তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে জেলা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সালেহ মোহাম্মদ ইথেন এবং বিথী নামের এক নারীর ছবি দিয়ে লেখেন, ‘ওরা আমাকে বাঁচতে দিলো না। শেষ পর্যন্ত আমাকে মরতে হলো। পারলে আপনারা ওদের বিচার করেন।’
সালেহ মোহাম্মদ ইথেন সাংবাদিকদের বলেন, তার কাছ থেকে সীমান্ত ৩৫ লাখ টাকা ধার নেন। কিন্তু দীর্ঘদিন হলেও সেই টাকা পরিশোধ করেন নাই। এমনকি তাকে না জানিয়ে সীমান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি জানান, সীমান্ত টাকা দিতে না পারায় রোববার অথবা সোমবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার নামে লিখে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সীমান্ত আত্মহত্যা করবেন এটা ভাবতে পারেননি।
আরও জানা যায়, সম্প্রতি সীমান্ত সরকার বিথী নামের এক নারীকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর কথা লিখেছিলেন। এজন্য ওই নারী সীমান্তের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল রেলওয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এএসআই) ফজলুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।