টাঙ্গাইলে ‘শুরু’ নামের সংগঠন সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও!

টাঙ্গাইল সদর দুর্নীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল সমবায়ের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত একটি সংগঠন গ্রাহকদের সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। সদর উপজেলার গালা গ্রামের সোসাইটি ফর হিউম্যান ইউনিটি এন্ড রিসোর্সেস ইউটিলাইজেশন ‘শুরু’ নামের এই সংগঠনটি গ্রাহকদের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। শুক্রবার সকালে টাকা ফেরত পেতে ওই সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে গ্রাহকরা।

জানা যায়, টাঙ্গাইল সমবায়ের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সোসাইটি ফর হিউম্যান ইউনিটি এন্ড রিসোর্সেস ইউটিলাইজেশন ‘শুরু’ যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৬১২। ২০১০ সালের দিকে গালা গ্রামের মাজেদুর রহমান, আবু সাইদ, আব্দুর রাজ্জাকসহ কয়েকজনে মিলে ‌’শুরু’ নামের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করে। এরপর থেকে সংগঠনটি গালা বাজারে কার্যক্রম শুরু করে।

সমবায় অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করার নিয়ম না থাকলেও শুরু থেকেই তারা আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করে আসছিল। আর্থিক লেনদেন পরিচালনাকারী অনুমোদন প্রদানকারী সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি (এমআরএ) এর অনুমোদন ছাড়াই তারা এই আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করছিল। তারা এলাকার মানুষকে বিভিন্নভাবে এই সংগঠনে টাকার রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা গ্রাহকের সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়।

এই ঘটনায় মানববন্ধন করেছে ভূক্তভোগী গ্রাহকরা। মানববন্ধন চলাচলে বক্তব্য রাখেন ওই এনজিও’র সদস্য তারেক হাসান, আলী আহম্মদ, জয়নু বেগম, অঞ্জনা বেগম প্রমুখ।

ভূক্তভোগীরা বলেন, গ্রামের মধ্যবিত্ত, নিরীহ কৃষক থেকে শুরু করে দিন মজুররাও এই সংগঠনে টাকা রাখেন। এমননি অনেক প্রবাসীরাও টাকা রেখেছেন। তিন শতাধিক গ্রাহকের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক মাজেদুর রহমান উধাও হয়ে গেছে। আমাদের কষ্টের অর্জিত টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

প্রতারণার স্বীকার বৃদ্ধ আলী আহম্মদ বলেন, আমার চার মেয়ে ও এক ছেলে। ১০ বছর আগে সৌদি আরবে থাকা অবস্থায় আমার ছেলে মারা যায়। সেখান থেকে পাওয়া দুই লাখ টাকা শুরু এনজিওতে রেখেছিলাম। সেই দুই লাখ টাকা নিয়ে মালিক পালিয়েছে। আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।

শারিরীক প্রতিবন্ধী শাহজাহান মিয়া বলেন, আমি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারি না। তাই বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভিক্ষা করে জীবন যাপন করি। সেই টাকা থেকে জমিয়ে এক লাখ টাকা ১২ বছর আগে জমা করেছিলাম। সেখান থেকে আমি কোনো লাভ নেই নি। সেই টাকা নিয়েও মালিক পালিয়েছে। ৬০ বছরের বৃদ্ধা জয়নু বেগম বলেন, আমার বাড়ি বিক্রি করা চার লাখ টাকা এ এনজিওতে রেখেছিলাম। আমার টাকা নিয়ে মালিক পালিয়ে যাওয়ায় আমি এখন নিঃস্ব।

এ বিষয়ে শুরু এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক মাজেদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, একটি প্রতারক চক্র মিলে এনজিওটি করেছিল। আমরা তাদের কোনো অনুমতি দেই নি। তবে আমরা ওই কমিটি বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *