মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুর উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের মজিদপুর গ্রামের সিকদারপাড়া এলাকায় প্রায় ২২ বছর আগে বাড়ির পাশে ১৫টি বরইগাছের চারা রোপণ করেছিলেন সাইজ উদ্দিন সিকদার। এখন সেখানে রয়েছে ৫০টি বরইগাছ। তাঁকে দেখে প্রতিবেশীরাও বরইগাছ রোপণ করেন। বর্তমানে প্রায় পুরো গ্রাম বরইগাছে ভরে গেছে। পাহাড়ি লাল মাটিবেষ্টিত মজিদপুর গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আছে বরইগাছ। চলতি মৌসুমে বরই বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন গ্রামের অনেক বাসিন্দা।
সাইজ উদ্দিন সিকদার বলেন, তিনি কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কৃষিই তাঁদের পরিবারের প্রধান পেশা। তাঁরা আগে জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করতেন। ২০০০ সালে বাড়ির পাশের জমিতে বেগুনের পরিবর্তে বরইগাছের ১৫টি চারা রোপণ করেন। পর্যায়ক্রমে তা বেড়ে ৫০টিতে দাঁড়ায়। তবে তিনি একটি চারাও কেনেননি। ঘরের সামনে থাকা পুরোনো একটি বরইগাছের বিচি থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেন। সেখানে আপেল কুল, থাই কুল, মিষ্টি ও টক জাতের বরইগাছও আছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সাইজ উদ্দিন বরইগাছে ঝাঁকি দিচ্ছেন। তাঁর স্ত্রী সখিনা বেগম ঝাঁকিতে পড়া বরই সংগ্রহ করছেন। পরে সাইজ উদ্দিনও বরই সংগ্রহে স্ত্রীকে সহযোগিতা করেন। সেখানে আলাপকালে সাইজ উদ্দিন বলেন, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যার জন্য সাময়িকভাবে নিয়োজিত শ্রমিকের মজুরিসহ সব মিলিয়ে বছরে তাঁর ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর বরই বিক্রি করে আয় করেন প্রায় লাখ টাকা। এ বছর চাঁন মিয়া ও আবদুল হক নামের দুজন পাইকারি ব্যবসায়ী বাড়ি থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বরই কিনে গাজীপুরের কালিয়াকৈর, মির্জাপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন। বরইগাছ ছাড়াও তিনি জমিতে ১৩০টি মাল্টার চারা রোপণ করেছেন, যা থেকে ফল আসতে শুরু করেছে।
মজিদপুর গ্রামের বাসিন্দা ও পলাশতলী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক শামসুল আলম সিকদার বলেন, সাইজ সিকদার একটা বরইবাগান করেছেন। সেটা দেখে অনেকেই বরইবাগান করেছেন। তাঁর আটটা বরইগাছ আছে। বরই বিক্রি করে বছরে প্রায় ৬০ হাজার টাকা বাড়তি আয় করেন তিনি। সাইজ উদ্দিনকে দেখে তিনি সাতটি বরইগাছের চারা রোপণ করেন। বড়ই বিক্রি করে তিনি বছরে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করেন।
গ্রামটির বেশির ভাগ বাড়িতে বরইগাছ আছে। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রমজান আলী, আবদুর রশিদ, খলিলুর রহমান, বাবুল, আবদুল মাতাব্বর, তোফাজ্জল হোসেন, মোক্তার হোসেন, বারেক সরকার, আবদুর রশিদ ও আবদুল মালেক বরই চাষ করেন। তাঁরা জানিয়েছেন, গ্রামটি থেকে বছরে ৩০ লাখ টাকার ওপরে বরই কেনাবেচা হয়। আবদুর রশিদ সিকদার বলেন, সাইজ উদ্দিনকে দেখে তিনি সাতটি বরইগাছের চারা রোপণ করেন। বড়ই বিক্রি করে তিনি বছরে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করেন।
পাইকারি ব্যবসায়ী চাঁন মিয়া বলেন, পুরো গ্রামটিতে থাকা গাছগুলোর বরই মিষ্টি। বাজারে এর চাহিদাও বেশি। তিনি ৭০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বরই কিনলেও পরিবহন খরচ ও মজুরি মিলিয়ে বরইয়ের দাম বেড়ে যায়, যা বাজারে মৌসুমের শুরুতে ১৮০ টাকা এবং বর্তমানে ১২০-১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার পাল জানান, গ্রামটির চাষিদের বরই চাষের জন্য বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হবে। তাছাড়া সরকারিভাবে উৎসাহী চাষীদের বিশেষ সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।