গোপালপুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে ক্যানসার প্রতিরোধী ফল ননী

অর্থনীতি কৃষি গোপালপুর মধুপুর

গোপালপুর প্রতিনিধি: ক্যানসারসহ নানা রোগের মহৌষধ হিসেবে পরিচিত ননী ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে গোপালপুরে।

গোপালপুরের মো. বাবুল মিয়া জানান, বছর চারেক আগে গুরুতর অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার প্রয়োজনে যশোর থেকে চার হাজার টাকা কেজি দরে ক্যানসার প্রতিরোধী ঔষধি গুণসম্পন্ন ননী ফল কিনে আনেন। একপর্যায়ে পাকা ননী ফলের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে ছাদবাগান গড়েন। চারা উৎপাদন বাড়তে থাকলে গোপালপুরের পার্শ্ববর্তী গোলাবাড়ী ইউনিয়নের গোপদ, মধুপুরসংলগ্ন পূর্ব সিঙ্গুড়া গ্রামে ১২ কাঠা জমিতে ননী ফল গাছের বাগান গড়ে তোলেন।

বাগান ঘুরে দেখা যায়, তিন শতাধিক গাছের উচ্চতা ৮ থেকে ১৪ ফুট হয়েছে , ফল ধরছে প্রতিটি গাছে। এ ছাড়াও তিনি বাগানে করোসল, ডায়াবেটিকসের জন্য উপকারী ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছ রোপণ করেছেন। মুঠোফোনে অর্ডার পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ননী ফল ও গাছের চারা বিক্রি করেন।

এতে তার মাসিক আয় হচ্ছে ৩০-৫০ হাজার টাকা। বাগান পরিচর্যায় একাধিক শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। ঔষধি গুণসম্পন্ন হওয়ায় সারা দেশে ননী ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। হারবাল ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসহ, সারা দেশেই সাধারণ ক্রেতা রয়েছে বলে জানান তিনি।

বাবুল মিয়া বলেন, যশোর থেকে ননী ফল কিনে এনে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই জুস করে খেতাম। এতে উভয়েই বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাই। উচ্চমূল্যে কিনতে হতো বিধায়, বাগান করার উদ্দেশ্যে বীজ থেকে চারা রোপণ করি। এরপর গ্রামে শ্বশুর থেকে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া ১২ কাঠা জমিতে ননী ফলের বাগান করেছি।

ননী ফল গাছটি মূলত আফ্রিকান। এদেশে এগুলো চাষে ব্যাপক পরিচর্যার দরকার হয়। গোরব, পানি, সরিষার খৈল, হাড়ের গুঁড়া, ডিমের খোসার পাউডার, কোকোপিট, সিনকুচিসহ বিভিন্ন ধরনের জৈবসার নিয়মিত প্রয়োগ না করলে আশানুরূপ ফলন হয় না। গাছ রোপণের ৭ মাসের মধ্যেই ফল আসে, সারা বছরই ফলন পাওয়া যায়।

সিঙ্গুড়া গ্রামের মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বাগান পরিচর্যায় আমিও মাঝে মাঝে কাজ করে থাকি। অনেক দূর থেকে প্রতিদিন লোকজন আসে এই বাগান দেখতে। তারা ননী ফল কিনেও নিয়ে যায়। অনেক চাহিদা রয়েছে এটার।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আহসানুল বাশার জানান, ননী ফল বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এই ফল খাওয়ার পদ্ধতি খুব সহজ। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তারা এগুলো সংগ্রহ করে নিজেরাই জুস তৈরি করে খাচ্ছে। গুণাগুণের দিক থেকে ননী ফল ক্যানসার প্রতিরোধক। পুরাতন বাতের ব্যথা নিরাময়ে এই গাছের ফল ও পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, দেশে ভেষজ গাছ কমে যাচ্ছে। নিজেদের স্বার্থে ভেষজ গাছ লাগানো দরকার। ভেষজ উদ্ভিদে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে শুরু করেছেন- এটাই আশার কথা।

উল্লেখ্য, গবেষণায় উঠে এসেছে ক্যানসারসহ নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অবিশ্বাস্যভাবে কাজ করে ননী ফল। ভিটামিন সি, ই, বি, বি-২, বি-৬, বি-১২, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, কপার, মিনারেলসহ ১৫০টির বেশি ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে ননী ফলে। এর দ্বারা উচ্চ রক্তচাপ কমে, ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে ক্যানসার ও টিউমার ফাইটিং উপাদান রয়েছে। ব্রেস্ট ক্যানসারে এর ফলাফল অবিশ্বাস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *