মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুর উপজেলায় নির্বিচারে চলছে পাহাড়ের টিলা কাটা। পরে সেই মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। স্থানীয় প্রশাসন এই টিলা কাটা বন্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও আইনের তোয়াক্কা না করে রাতের আঁধারে প্রতিদিন পাহাড়ের উঁচু টিলা কেটে শতশত ট্রাক ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করে পাহাড় কাটা হলেও মাটি লুটেরারা প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষ ভয়ে টু শব্দ করতে পারছে না।
মির্জাপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে আজগানা, তরফপুর ও বাঁশতৈল ইউনিয়ন হলো পাহাড়ি লালমাটি অঞ্চল। এই তিনটি ইউনিয়নে রয়েছে বনাঞ্চল ও বড় বড় পাহাড়ি টিলা। অন্যদিকে, মির্জাপুর উপজেলায় রয়েছে শতাধিক ইটভাটা। ভাটায় ইট তৈরিতে এই লাল মাটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই পাহাড়ের লাল মাটি কাটার অবৈধ ব্যবসাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি চক্র। চক্রের সদস্যরা বছরের প্রায় অর্ধেক সময় পাহাড়ের টিলার মাটি কেটে উচ্চমূল্যে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছেন।
রবিবার (৮ জানুয়ারি) উপজেলার তরফপুর ইউনিয়নের টাকিয়া কদমা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি স্পটে বিশাল এলাকা থেকে পাহাড়ের টিলা কেটে মাটি লুটে নিচ্ছে চক্রটি। রাতভর চলে এই টিলা কাটা। শতশত ট্রাক মাটি অন্যত্র বিক্রি করছেন তারা। একইভাবে, আজগানা ইউনিয়নের তেলিনা চিতেশ্বরী ও বাঁশতৈল ইউনিয়নের গায়রাবেতিলসহ পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন স্থানে চলছে এই টিলা কাটা।
জানা যায়, টাকিয়া কদমা গ্রামের সাহিনুর ইসলাম ইটভাটায় মাটি বিক্রি করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের আশপাশের বাড়ির লোকজন মাটি বিক্রি করেছে। এজন্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গরু-ছাগল ও শিশুদের নিয়ে চলাফেরার অসুবিধা হচ্ছিল। তাই জমি সমতল করার জন্য আমি ও আমার ভাই আলমগীর ১৯০ শতাংশ জমির মাটি পাঁচগাও গ্রামের রোকনের কাছে এক হাজার টাকা ট্রাক হিসেবে বিক্রি করেছি।
একই গ্রামের শওকত হোসেন বলেন, আমি নতুন ঘর বানাবো। আশপাশের লোকজন টিলা কেটে নিচু করছে। আমি উঁচুতে কীভাবে ঘর দিই? সেজন্য মাসুদ নামে এক ব্যক্তির কাছে আমার টিলার মাটি বিক্রি করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টাকিয়া কদমা গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা দাবি করেন, সস্তায় টিলার মাটি কিনে পাচগাঁও গ্রামের রোকন, মাসুদ ও শহিদুল রাতের আঁধারে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে পাহাড়ের রাস্তাগুলো ভেঙে যাচ্ছে। ছিট মামুদপুর গ্রামের কয়েকজন জানান, রাতভর চলে মাটির ট্রাক। ট্রাকের শব্দে সবার ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বাঁশতৈল রেঞ্জ অফিসের রেঞ্জার আশরাফুল আলম বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় মাটি কাটার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া রেকর্ডিয় জমি থেকে লাল মাটি কাটার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে।
পরিবেশ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের উপ-পরিচালক জমিরউদ্দিন বলেন, পাহাড়ি টিলা কাটায় ভূ-প্রকৃতিসহ এলাকার জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে। তথ্য পেলেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।