নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দায় নদী থেকে অবৈধ মাটি কেটে বিক্রি করতে বাঁধা দেওয়ায় সড়কে খুঁটি ও কাঁটা দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে প্রভাবশালী একটি পরিবার। এতে গত এক বছর যাবত ঘারিন্দা ইউনিয়নের রানাগাছা গ্রামের শতাধিক পরিবারের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও আজ পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি। শত শত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ভূক্তভোগীরা।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ঘারিন্দা ইউনিয়নের রানাগাছা গ্রামের তিন দিকে এলেংজানি নদী। ইতিমধ্যে এ গ্রামের একটি কবরস্থান নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে। আরেকটি নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। গ্রামের দক্ষিণ পাড়া নদী ভাঙনের কারনে দীর্ঘদিন মূল গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো। পাঁচ দশক আগে নতুনভাবে চর জেগে উঠছে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তাজুল ইসলামসহ প্রায় শতাধিক পরিবার নয়াপাড়ায় বসবাস শুরু করেন। এই গ্রামের মানুষ প্রায় ৩৫ বছর যাবত পাকা সড়ক থেকে একটি কাঁচা সড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করেছেন। সড়কটি ইতিপূর্বে ইউনিয়ন ও জেলা পরিষদ থেকে প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কারও করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওই গ্রামের শুকুর আলী ও দারগা আলী ও আবু সাঈদের ভাতিজা সাইদ নাসিরুল্লা দীর্ঘদিন যাবত অবৈধ ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে অবৈধভাবে নদীর পাড় কেটে বিক্রি করে আসছিলেন। নয়াপাড়ার সড়কটি ভেকু ও বড় ট্রাক যাতায়াত করাতে অনেক ক্ষতি হয়। পরে গ্রামের অবৈধ ট্রাক ও ভেকু চলাচলে বাঁধা দেয়। পরে সাইদ নাসিরুল্লা তারা চাচাদের বলে নয়াপাড়া সড়কে খুঁটি দিয়ে বন্ধ করে দেন। তারপর থেকে প্রায় এক বছর যাবত ওই গ্রামের শত শত মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাকা সড়ক থেকে কাচা সড়ক পর্যন্ত প্রায় ২০ মিটার এলাকায় গাছের গুড়ি পুতে অর্ধেকের বেশি সড়ক বন্ধ করে রেখেছেন। এছাড়াও পাশে খেঁজুর ও বড়ই গাছের কাটা রেখেছেন। এতে শিশু বৃদ্ধদের খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এদিকে কয়েক সাংবাদিক সরেজমিনে গেলে তাদের দেখে অভিযুক্ত শুকুর আলী ও তার ভাইয়েরা দুর্ব্যবহার ও খারাপ মন্তব্য শুরু করেন।
ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা তায়েজ উদ্দিন, শাহ আলম, মজনু মিয়াসহ কয়েকজন জানান, সড়কটি জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড করা। অবৈধভাবে মাটি বিক্রিতে বাঁধা দেওয়ায় আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাতে চলাচলের সময় অনেকের পায়ে কাটা লেগে কষ্ট করতে হয়। দিনের বেলায় ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাওয়ার সময় কাটায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আমরা এর সুরাহা চাই।
ওই গ্রামের মলি বেগম, রেশমা বেগম ও ফাতেমা বেগম বলেন, সড়কে খুঁটি দেওয়ার পর থেকে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। আমরা ভূমি অফিস, ডিসি অফিস, এসপি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও সুরাহা পাচ্ছি না। উল্টো শুকুর আলী, আবু সাঈদ ও দারগা আলী আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ পারে।
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত আবু সাঈদ বলেন, আমাদের জমিতে খুঁটি দিয়েছি। এখানে কারো কোন রাস্তা নেই। এছাড়াও আমরা কোন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত নই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলায় একাধিকবার বসে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সড়কের পাশে বিভিন্ন গাছের কাঁটা রাখা ঠিক হয়নি। এটা কোন মানুষের কাজ হতে পারে না।
এ অভিযোগ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, সরকারি কোন সড়কে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।