সখীপুর প্রতিনিধি: সখীপুরে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি ও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর সাথে দ্বন্দ্বে গত ১৫ দিন যাবত শিক্ষার্থী শূন্য রয়েছে সুরীরচালা আব্দুল হামিদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়।
শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষার্থী না থাকায় পাঠবিহীন স্কুলের সময় কাটিয়ে চলে যান। বিদ্যালয়ের সকল অনিয়ম দুর্নীতি বিরুদ্ধে এলাকাবাসী প্রতিরোধ করলে বিভিন্ন মিথ্যা ওজুহাতে মামলা দেন ওই প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন । অচিরে প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করে নতুন প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিস্তারিত একটি লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দিয়েছেন এলাকাবাসী ও নির্বাচিত বিদ্যালয় পরিচালক কমিটি।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিন ও শিক্ষকমন্ডলী অফিসে বসে আছেন। দু’একজন শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পড়াচ্ছেন কিন্ত কোন কোন শ্রেণিকক্ষে একজন বা দুইজন আবার কোন কোন শ্রেণি কক্ষ ফাঁকা । দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব শ্রেণি মিলিয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে মাত্র ১০ জন। অনেক সময় ক্লাস না নিয়েই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়টির এ দৃশ্য নতুন নয়। বর্তমানে যিনি প্রধান শিক্ষক রয়েছেন, তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই শিক্ষার্থী হারাতে থাকে এই বিদ্যালয় । এরমধ্যে সব ক্লাস মিলিয়ে প্রতিদিন উপস্থিতি তিন-চার জনের বেশি হয় না। ক্লাস নেওয়ার পরিবেশ না থাকায় শিক্ষকরা ঘুরেফিরে সময় কাটান।এমন পরিস্থিতির জন্য অশোভন আচরণ ও অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বের কথা বলছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষিক কফিল উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ের কোন বিষয়ে কোন সাংবাদিককে কিছু বলবো না। বিদ্যালয়ের কোন ছবি তুলতেও দেবো না পত্রিকায় লিখে যা পারেন করেন।
নব নির্বাচিত কমিটির সভাপতি সাইদ মিয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজের স্ত্রীকে বিদ্যালয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই গাছ কেটে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমি নির্বাচিত কমিটির সভাপতি হলেও আমাদের অজান্তেই উপজেলায় এডহক কমিটির জন্য লিখিত আবেদন দিয়েছে। আমরা গ্রামবাসী এই প্রধান শিক্ষকের বিচার চাই। বিদ্যালয় থেকে অপসারণ চাই।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য ইন্দ্র চন্দ্র বর্মন বলেন, এই প্রধান শিক্ষক দুর্নীতিগ্রস্ত। বিদ্যালয়ের নিয়ম নীতি তোযাক্কা করেন না। একটি মামলা বাজ লোক। আমাদের নির্বাচিত কমিটিকে মানেন না তিনি। এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রুহুল আমিন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার জেরে কমিটির লোকজনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বন্দ্বের কারণে স্কুলটি শিক্ষার্থীশূন্য। স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষককে স্থায়ীভাবে এখান থেকে অপসারণ করা না হলে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাবেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন পাটোয়ারী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত কমিটি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন সাংবাদিকদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা ঠিক হয়নি ওই প্রধান শিক্ষকের।
স্কুল কমিটির নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা উপজেলা একাডেমিক অফিসার মোঃ মিল্টন আনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৪ এপ্রিল স্কুলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হলেও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির রেষারেষির কারণে ৮ এপ্রিল নির্বাচিত কমিটির ক্ষমতা হস্তান্তর স্থগিত করা হয়।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, স্কুল কমিটির সদস্যবৃন্দ ও প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দিনের দ্বন্দ্ব নিরশনে আমরা কাজ করছি। এ ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক দুর্নীতিগ্রস্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা বলেন, প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম, শিক্ষার্থী-সংকটসহ অনেক অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল সুরীরচালা আব্দুল হামিদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন হয়। ৮ এপ্রিল নির্বাচিত কমিটিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর স্থগিত করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক, নির্বাচিত কমিটি ও এলাকাবাসীর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এই নিউজ লেখা পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থী শূন্য রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটি।