টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠের বেহাল দশা: রক্ষণাবেক্ষণে স্বেচ্ছাসেবক দল

ইতিহাস ও ঐতিহ্য টাঙ্গাইল সদর পরিবেশ ফিচার

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ ময়দানের বেহাল দশা দেখে এর রক্ষণাবেক্ষণে এগিয়ে এসেছে একদল স্বেচ্ছাসেবী। তারা নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে পাইপ কিনে ঈদগাহ্ মাঠে পানি দিচ্ছেন। এই মাঠের মধ্য দিয়ে যেন কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করে মাঠটিকে নষ্ট করতে না পারে সেজন্য মাঠের দক্ষিণ দিকের ভেঙে যাওয়া গেটটি বাঁশ দিয়ে অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন। এই গেট দিয়ে এখন শুধুমাত্র পথচারীগণ চলাচল করতে পারে। এছাড়া ঈদগাহ্ মাঠে গাছ লাগানোর পরিকল্পনাসহ সারাবছর মাঠটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একজন লোক নিজেদের অর্থায়নে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনাও আছে তাদের।

এই স্বেচ্ছাসেবকদের দাবি, পৌর কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর ঈদগাহ্ মাঠের উন্নয়নের কথা বললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে এবার ঈদুল ফিতরের নামাজের সময় তোপের মুখে পড়েন টাঙ্গাইল পৌর মেয়র এস.এম সিরাজুল হক আলমগীর ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. ছানোয়ার হোসেন।

স্বেচ্ছাসেবকগণ নিজ উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ঈদগাহ্ মাঠ রক্ষণাবেক্ষণে এগিয়ে এসেছেন তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক, মাহবুব মনি, আব্দুল আলীম, দিনেশ চৌহান, গণেশ চৌহান, আনন্দ চৌহান, মোহাম্মদ হুমায়ুন, মো. মজিবর মিয়া, রঞ্জিত সরকার, শ্যামল চৌহান, সবুজ মোল্লা, শহিদুর রহমান, সিদ্দিক মন্ডল, মো. হৃদয় মিয়া প্রমুখ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ১৯০৫ সালে স্থাপিত এই ঈদগাহ্ মাঠটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব টাঙ্গাইল পৌর কর্তৃপক্ষের হলেও তারা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করছেন না। টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠের বর্তমানে বেহাল দশা। মাঠটি এখন ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। মাঠে এখন ঘাস উঠে গিয়ে সম্পূর্ণভাবে ফাঁকা হয়ে গেছে। এছাড়া মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের গেটগুলো ভেঙে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাঠের সীমানা প্রাচীর বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গেছে। ঈদগাহ্ মাঠের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের যান চলাচলের ফলে নানা স্থানে মাটি উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মাঠের পূর্ব পাশে টাঙ্গাইল পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে রাবিশ এনে জড়ো করে রেখেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কেবলমাত্র বছরে দুই ঈদেই লোক দেখানো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এই মাঠের। তারপরে আর পৌর কর্তৃপক্ষ কোন খোঁজ-খবর রাখে না এই মাঠের।

স্বেচ্ছাসেবকগণ জানান, গত বেশ কয়েকদিন ধরে ঈদগাহ্ মাঠের মধ্যে দিয়ে যানবাহন চলাচলের সময় পুরো মাঠ ধুলোয় অন্ধকার হয়ে যায়। এছাড়া ঝড়ো বাতাস এলেই ঈদগাহ্ মাঠ ও এর আশপাশের এলাকায় মাঠের ধুলোবালি উড়ে আস্তরণ পড়ে যায়। মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের সব গেট ভাঙ্গা থাকায় ছোট বড় সব ধরনের যানবাহন মাঠের উপর দিয়ে যাতায়াত করে।

স্বেচ্ছাসেবকগণ আরও জানান, কিছুদিন পূর্বেও মাঠের পশ্চিম দিকের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে ডাব গাছ, আম গাছসহ বিভিন্ন ধরনের ফলজ ও বনজ গাছ ছিল। সেগুলো বিভিন্ন সময়ে ঝড়ে ভেঙে গেছে। সেই জায়গাগুলোতে তারা নতুন করে গাছ লাগাতে চাচ্ছে। এছাড়া মাঠের ধুলোবালি উড়া বন্ধ ও নতুন করে ঘাস গজানোর জন্য পাইপ দিয়ে পানি দেওয়া হচ্ছে। এই মাঠের মধ্যে দিয়ে যেন কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে না পারে সেজন্য মাঠের দক্ষিণ দিকের ভাঙ্গা গেটটি বাঁশ দিয়ে অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারা আশাবাদী, এই রক্ষণাবেক্ষণের ফলে এই ঈদগাহ্ মাঠ আবারও ব্যবহারের উপযুক্ত হবে।

বিন্দুবাসিনী স্কুল ফ্রেন্ডস নেটওয়ার্কের (এসএফএন) সাধারণ সম্পাদক ও যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মো. শামীম আল মামুন বলেন, তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠের পশ্চিম ও উত্তর পাশের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে একশত ছায়া দানকারী গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া একটু স্বাভাবিক হলেই গাছ লাগানো শুরু করা হবে। তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে লাগানো গাছগুলো বড় না হওয়া পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণও করা হবে।

এ প্রসঙ্গে মো. আবুবক্কর মিয়া, জাহিদুল ইসলাম, মো. বাহারুল ইসলাম বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে টাঙ্গাইলের এই মাঠটির বর্তমানে বেহাল দশা। পৌর কর্তৃপক্ষের মাঠটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকলেও তারা সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না। শতাব্দী প্রাচীন এই ঈদগাহ্ মাঠের উন্নয়নের জোর দাবি জানান তারা।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস. এম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ ও শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানের উন্নয়নের জন্য প্রস্তাবিত ৩ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার প্রকল্পটি মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) অনুমোদন হয়েছে। খুব দ্রুতই ঈদগাহ্ উন্নয়নের কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এই প্রকল্পে ঈদগাহ্ মাঠের উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে, বর্তমান মিম্বরটি ভেঙে বড় করা, মাঠে সবুজ ঘাস লাগানো, চারটি প্রবেশদ্বারে নতুন করে গেট লাগানোসহ মহিলাদের নামাজ আদায়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ও ওজুখানা তৈরি করা।

তিনি আরও জানান, খুব দ্রুতই ঈদগাহ্ উন্নয়নে পৌর কর্তৃপক্ষ টেন্ডার আহ্বান করবে এবং আশা করা যায় ঈদুল আযহার আগেই উন্নয়নের কাজ শুরু করা যাবে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, এবার ঈদুল ফিতরের নামাজের সময় প্রতিশ্রুত ঈদগাহ্ উন্নয়নের কাজের অনুমোদন হয়েছে। আগামী বছরের ঈদুল ফিতরের পূর্বেই টাঙ্গাইলবাসীকে একটি নান্দনিক ঈদগাহ্ উপহার দিতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, এই মাঠের উন্নয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, মাঠে শুধুমাত্র শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সুযোগ থাকবে। এই ঈদগাহ্ মাঠকে কেন্দ্র করে এখন যে সমস্ত ব্যবসায়িক স্থাপনা ও কর্মকাণ্ড রয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *