নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সাজানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বিয়ের নোটিশ পাওয়া সহকারী শিক্ষক রনি প্রতাপ পাল অবশেষে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন।
শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর রাত ১১ টার দিকে কালিহাতী উপজেলার খাসমগড়া গ্রামের সত্যপালের মেয়ে স্বর্ণা পালের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে দু’পক্ষের পরিবারের লোকজন ছাড়াও রনি প্রতাপ পালের স্কুলের শিক্ষক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, গত ২২ সেপ্টেম্বর সহকারী শিক্ষক রনি ও স্বর্ণার আশীর্বাদ সম্পন্ন হয়। লগ্ন অনুসারে শুক্রবার রাতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এ বিয়েতে নব দম্পতি খুবই খুশি।
শিক্ষক রনির পরিবারের সদস্যরা জানায়, সনাতন ধর্মালম্বীদের বিয়ের ক্ষেত্রে অনেক কিছুই যাচাই-বাছাই করতে হয়। সম্প্রতি রনির বাবাও মারা যান। যে কারণে সব মিলিয়ে রনির বিয়ে করতে দেরি হয়েছিল। দু’পক্ষের সম্মতিতে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষক রনি প্রতাপ পাল আরো জানান, কোনো চাপে নয়- তিনি পরিবারের পছন্দেই বিয়ে করেছেন। বিয়েতে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। পারিবারিক সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে বিয়ে করতে দেরি হয়েছে। মূলত প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ঢাকতে তাকে বিয়ে করার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়।
তবে নোটিশ দেওয়ার আগে থেকেই বিয়ের জন্য পরিবারের লোকজন পাত্রীর সন্ধান করছিলেন। তারা পছন্দ মতো পাত্রীও পাচ্ছিলেন না। শিক্ষক রনি প্রতাপ পালের স্ত্রী স্বর্না পাল জানান, এ বিয়েতে তিনি খুব খুশি হয়েছেন- তিনি সবার আশীর্বাদ চান।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৬ জুলাই সাজানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম তার প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক রনি প্রতাপ পালকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিয়ে করতে নোটিশ দেন। নোটিশে বলা হয়, আপনি ২০১৬ সালে ৬ নভেম্বরে এই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম শিক্ষা) পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর অবগত হলাম, আপনি অবিবাহিত রয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আপনাকে বারবার মৌখিকভাবে তাগিদ দিয়েছি বিয়ে করার জন্য।
কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, যোগদানের কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও আপনি বিয়ে করেননি। বিদ্যালয়টিতে সহশিক্ষা চালু রয়েছে। অভিভাবকরা অবিবাহিত শিক্ষক নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। সুতরাং বিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থে নোটিশপ্রাপ্তির ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিবাহকার্য সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য আপনাকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া গেল।
বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় পর্যায়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। প্রধান শিক্ষকের বহিষ্কার চেয়ে ছাত্র, ছাত্রী, অভিভাবক, সাবেক শিক্ষকরা ও স্থানীয়রা মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন। নিয়মবহির্ভূত বিয়ের নোটিশ দেওয়ায় ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক সরকারি তদন্ত চলছে। এ বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।