মির্জাপুরের দেওহাটা-চড়পাড়া সড়কে বাতি না জ্বলায় ভুতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি!

জাতীয় পরিবেশ ফিচার মির্জাপুর

মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুর উপজেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দেওহাটা থেকে পুষ্টকামুরী চড়পাড়া পর্যন্ত পৌনে চার কিলোমিটার সড়কের উভয়পাশের ২৩৪টি সড়ক বাতির মধ্যে ১৬২টি সড়কবাতি না জ্বলায় এক ভুতুরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। একারণে মহাসড়কের এই পৌনে চার কিলোমিটার এলাকায় ভুতুড়ে অবস্থায় ছিনতাই-রাহাজানিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশংঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

 

 

২০২০ সালে দেওহাটা থেকে চড়পাড়া পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯২টি সড়কবাতি স্থাপন করা হয়। সড়কটির তিন কিলোমিটার এলাকায় মির্জাপুর পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষও রাস্তার দুই পাশে ৩৮টি বাতি স্থাপন করে। চারটি খুঁটিতে দুটি করে বাতিসহ ২৩৪টি সড়ক বাতির মধ্যে এখন জ্বলছে মাত্র ৭২টি বাতি।

 

 

মির্জাপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের (পুরাতন) দেওহাটা থেকে পুষ্টকামুরী চড়পাড়া পর্যন্ত পৌনে চার কিলোমিটার এবং মির্জাপুর-উয়ার্শী সড়কের দেওলী ব্রিজ এলাকায় ৪১০ মিটার সড়কের উন্নয়ন কাজের টেন্ডার আহ্বান করে। এই উন্নয়ন কাজের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা।

 

 

টেন্ডারের মাধ্যমে যশোরের মাইনউদ্দিন বাশির মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে কাজটি শুরু করে ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ করে। সড়কের দুপাশে ড্রেন নির্মাণ করা হয়। ড্রেনের ওপর ঢালাই দিয়ে টাইলস স্থাপন করে তিন ফুট প্রশস্ত ফুটপাথ তৈরি করা হয়। রাতে আলোকিত করতে লোহার পাইপে মহাসড়কের পৌনে চার কিলোমিটার রাস্তার দুপাশে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯২টি রঙিন বাতি স্থাপন করা হয়, যার প্রতিটির পেছনে খরচ হয়েছে ৩১ হাজার ২৫০ টাকা।

ওই প্রকল্পের এই বাতি স্থাপনের আগে মির্জাপুর পৌরসভা থেকে মহাসড়কের দুই পাশে ৩৮টি বাতি বসানো হয়েছিল। প্রকল্পের বাতি স্থাপনের পর পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের চারটি সড়কবাতির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে। প্রকল্পটির অধীনে এসব বাতি স্থাপনের পর কয়েক মাসের মধ্যেই প্রায় সবগুলোই বন্ধ হয়ে যায়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তৃপক্ষ একবছর পর তা চালু করলেও পুনরায় ১৬২টি সড়কবাতি বন্ধ হয়ে যায়।

ফলে মহাসড়কের এই পৌনে চার কিলোমিটার এলাকায় ভুতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির বাতি বন্ধ থাকায় রাতে মাদক বিক্রি ও ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘঠিত হয় বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে প্রায় সব বাতিই বন্ধ দেখা যায়। যেসব বাতি জ্বলছে সেখানে একটু আলোকিত, আবার যেসব বাতি জ্বলছে না সেখানে ভুতুড়ে অন্ধকার। পুষ্টকামুরী জহুর বাড়ি মোড় এলাকায় পৌরসভার চারটি বাতি বন্ধ রয়েছে। এসময় যমুনা ক্লিনিকের পূর্বপাশ হতে দেওহাটা পর্যন্ত প্রায় খুঁটির বাতিই বন্ধ দেখা যায়। ওই এলাকায় রাস্তা অন্ধকারে থাকায় সড়কটিতে মাদক বিক্রি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া ডাকাতির ঘটনাও ঘটতে পারে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

বাইমহাটী মাস্টার পাড়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ হানিফ মিয়া জানান, প্রতিদিন রাত আটটার দিকে ভাগ্নিকে কোচিং থেকে বাসায় আনতে হয়। মহাসড়কের পাশের বাতিগুলো বন্ধ থাকায় অন্ধকারে ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরি।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, ২০০০ সালে মির্জাপুর পৌরসভা গঠনের পর রাস্তায় দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় বিদ্যুতের আলোয় রাস্তায় চলাফেরা করেছি। মহাসড়কে হঠাৎ আলো বন্ধ হয়ে গেলে মানুষের চলাফেরায় ভোগান্তি পোহাতে হয়। ভয়ও কাজ করে। কখন কোন বিপদ সামনে আসে। অন্ধকারে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে, তার ঠিক নেই। সড়কবাতি থাকলে এ সমস্যা হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলম মিয়া বলেন, বাইমহাটী এলাকায় উপজেলা পরিষদ ছাড়াও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়সহ বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আশপাশের বাসায় ভাড়া থাকেন। তাদের ছেলে মেয়েরা বিকেলে সদরের বিভিন্ন স্থানে প্রাইভেট ও কোচিং করে থাকে। তারা সন্ধ্যার পর ওই রাস্তা দিয়ে বাসায় যেতে ভয় পায়।

মির্জাপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পৌরসভার উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড এলাকায় মহাসড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করে বাতি জালানোর ব্যবস্থা ছিল। নষ্ট হলে মেরামত করা হতো। সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্যোগে সড়কবাতি স্থাপন করায় পৌরসভার অধিকাংশ বাতি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন সড়ক ও জনপথের বাতিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে কয়েকটি জ্বললেও প্রায় সব বাতিই বিকল হয়ে আছে।

এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মাইনউদ্দিন বাশির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সড়ক ও জনপথ মির্জাপুরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ শামীম হোসাইন বলেন, আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। রাস্তার পাশে বাতির প্রকল্প দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *