বাসাইলের-বাসুলিয়ায়-স্কুল-কলেজ-ফাঁকি-দিয়ে

বাসাইলের বাসুলিয়ায় স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আড্ডা!

ফিচার বাসাইল

বাসাইল প্রতিনিধি: বাসাইল উপজেলায় বিনোদনের স্থান বাসুলিয়ায় স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আড্ডায় মেতে থাকার অভিযোগ উঠেছে অভিভাবকদের পক্ষে। এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঘুরতে আসেন; অবসর কাটান; মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অবাধ ঘোরাফেরার চিত্র উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।

 

বাসুলিয়ায় সরেজমিনে দেখা গেছে, যাদের বিনোদন স্পটে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে তাদের বেশির ভাগই উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসে না গিয়ে ওই স্পটে শিক্ষার্থীরা আড্ডায় মগ্ন। প্রকাশ্যে ধূমপান করা ছাড়াও বিভিন্ন আপত্তিকর ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

 

দেখা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা স্কুল ও কলেজ চলাকালীন সময়ে ইউনিফর্ম পরেই ঘুরছেন। কেউবা মেতে উঠছে অবাঞ্চিত আড্ডায়; আবার কেউবা ইউনিফর্ম খুলে ব্যাগে রেখে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাসুলিয়ায়। বন্ধু বা বান্ধবীকে নিয়ে একান্ত সময় কাটানোর পর বাসায় ফিরে যাচ্ছে তারা। এতে অভিভাবকরা তাদের সন্তান স্কুল কিংবা কলেজ ফাঁকি দিচ্ছে, তা কোনোভাবেই বুঝতে পারছে না।

 

জেলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা শিক্ষার্থীদের এই অবাধ মেলামেশায় সামাজিক অবক্ষয় বাড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি এমন পরিস্থিতির জন্য অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দায়ী করছেন। এমনকি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। এ অবস্থা নিরসনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিভাবক ও প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন তারা।

 

এছাড়া, বাসুলিয়ায় ক্লাস চলাকালে ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীদের অবাধ মেলামেশার চিত্রে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসা অনেকেই এসব দৃশ্য দেখে লজ্জায় পড়ছেন। এমনকি অনেক ইঞ্জিন চালিত নৌকার চালকরা এই আপত্তিকর মেলামেশার সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও বাসাইল উপজেলায় দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ মহিলা কলেজের ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন ছাত্রী এবং পার্শ্ববর্তী আরও কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আড্ডা দিতে দেখা গেছে।

 

বাসুলিয়ায় ঘুরে এসে একাধিক ব্যক্তি জানান, সকালের দিকটায় যখন স্কুল-কলেজ খোলা থাকে তখন এ জায়গাগুলোতে ইউনিফর্ম ও ইউনিফর্ম না পরা উঠতি বয়সের অসংখ্য ছেলে-মেয়ে ঘোরাফেরা করে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধু-বান্ধবীকে নিয়ে একান্ত সময় কাটাতে নিরাপদ স্থান হিসেবে তারা এই স্থান বেছে নেয়। অনেক সময় তাদেরকে অশালীন অবস্থায়ও দেখা যায়।

 

তারা বলেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের খোঁজ-খবর নেওয়া। সন্তানরা প্রতিদিন স্কুল-কলেজে যাচ্ছে কি না? বা সবগুলো ক্লাসে অংশ নিচ্ছে কি না, তা প্রতিদিন খোঁজ নেওয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। ক্লাস চলাকালে বিনোদন ও ভ্রমণের স্থানগুলোতে মনিটরিং ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা।

 

বাসুলিয়ায় ঘুরতে আসা আলম মিয়া জানান, অভিভাবকদের নিয়মিত খোঁজ রাখা, বাসুলিয়ায় স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়লে এসব স্থানে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা কমে আসবে। উপজেলার একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, নতুন পানি আসায় বাসুলিয়া এসেছি, তাই কলেজের ফাঁকে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে এসেছি।

 

উপজেলার একজন শিক্ষক জানান, প্রত্যেক অভিভাবককে খোঁজ রাখতে হবে, তাদের ছেলে বা মেয়ে স্কুল-কলেজে গেল কি না? এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে শিক্ষার্থীদের উপর নজরদারীর জন্য শিক্ষকদের দায়িত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অনুপস্থিত হলে বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে নোটিশ করতে হবে। পাশাপাশি পুলিশ-প্রশাসনের কিছু করণীয় রয়েছে।

তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে প্রশাসন মাইকিং করতে পারে, কোনো শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজ ইউনিফর্ম পরে অথবা না পরে ক্লাস চলাকালীন সময়ে ওইসব স্থানে অবস্থান করতে পারবে না। করলে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তাহলে এ অবস্থা কিছুটা কমতে পারে।

এ বিষয়ে স্থানীয় বিশিষ্টজন বলেন, শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে, পড়ালেখায় গুরুত্ব দিচ্ছে না, এটি সামাজিক অবক্ষয়ের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। লেখাপড়ার মূলস্রোত থেকে তারা দূরে সরে যাচ্ছে। যার ফলে মাদকাসক্ত হচ্ছে। এমনকি তারা সন্ত্রাসের পথও বেছে নিতে পারে। এক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনকেও তাদের দায়িত্ব নিতে হবে।

তারা দাবি করেন, প্রশাসনের তদারকিতে যে করেই হোক স্কুল-কলেজের ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা যেন ওইসব স্থানে গিয়ে বেপরোয়া ভাবে চলাফেরা করতে না পারে, লেখাপড়া বাদ দিয়ে যেন বাজে পথে না যেতে পারে সে বিষয়ে গুরুত্বসহকারে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

তাদের আরও দাবি, শিক্ষার্থীদের এমন চলাফেরা নজরে পড়ে। অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সময় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের সখ্যতা গড়ে উঠছে। ফলে তারা ধূমপান ও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসন বিভিন্ন সময় পুলিশের টহল বাড়িয়েছে, কিন্তু এ সমস্যার কোনো স্থানীয় সমাধান হয়নি। বিষয়টি সমাধানে শিক্ষক, অভিভাবক, পুলিশ, প্রশাসন সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমি বাসুলিয়াতে গিয়েছিলাম নৌকাতে কোন মানুষ নেই। শুক্রবার ও শনিবার বন্ধের দিন মোটামোটি একটু ভিড় হয়। স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে বাসুলিয়া ঘুরতে এসেছে ইউনিফর্ম পড়া ছাত্র-ছাত্রীরা এরকম দৃশ্য আমার চোখে পড়ে নাই। ওখানে অনৈতিক কোন কাজ করছে আমাদের চোখে পড়ে নাই। অপ্রীতিকর কোন ঘটনাও ঘটে নাই। ওখানে আমাদের পুলিশ সাদা পোশাকেও আছে, পোশাক পড়া অবস্থায় টহলের দায়িত্বেও আছে।

তিনি আরও জানান, যারা বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়; যাদের কাগজ ও হেলমেট নাই, একটি মোটরসাইকেলে তিনজন উঠে; এসপি স্যারকে বলে টাঙ্গাইল থেকে সার্জেন্ট নিয়ে এসে তাদের মামলা দিয়ে জরিমানা ও সতর্ক করা হচ্ছে। যারা এখানে আসে সুষ্ঠ ও নিরাপদে বিনোদন করে চলে যেতে পারে।

বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তার স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে শিক্ষার্থীরা বাসুলিয়ায় আড্ডায় মেতে থাকা প্রসঙ্গে বলেন, এ রকম যদি কিছু থাকে তাহলে অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। স্কুল খোলা হয়েছে ৯ তারিখে আপনি যেহেতু বিষয়টি জানিয়েছেন অবশ্যই দেখবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *