মির্জাপুর প্রতিনিধি: নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি, পৌর ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার, ৭ জুলাই সন্ধায় টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হাসান স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে এই তিন ইউনিটের কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমদিত উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটিতে বিএনপি পরিবারের সদস্যসহ বিবাহিত দুইজনকে পদ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
কমিটিতে সেতাব মাহমুদকে আগামী তিন মাসের জন্য উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক করা হয়েছে। এছাড়া সাতজন যুগ্ম আহবায়ক এবং ৪১ জনকে সদস্য করা হয়েছে। সাত যুগ্ম আহবায়ক হলেন- শেখ আবদুল্লাহ আল ফাহাদ, ওয়াকিল আহমেদ, শাফি আহমেদ সিমান্ত, মারুফ রহমান, জিহাদ হাসান, শুভ আহমেদ, ফয়সাল সিকদার। একই দিন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত দলীয় দুই প্যাডে আগামী এক বছরের মেয়াদের জন্য মির্জাপুর পৌর কমিটিতে শামীম ওসমান শিশিরকে সভাপতি ও আতিকুল ইসলাম আতিককে সাধারণ সম্পাদক এবং শাহরিয়া নাহিদকে সভাপতি ও সায়মন ইসলাম ইফতিকে সাধারণ সম্পাদক করে মির্জাপুর শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজ শাখার কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক সেতাব মাহমুদ এর বাবা একজন বিএনপি সমর্থক এবং ৬ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক শুভ আহমেদ বিবাহিত। তিনি গত ৪ জুলাই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
গত ২১ জুন উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক বরাবর একটি পত্র দেন। পত্রে সেতাব মাহমুদ-এর পিতা আনিছুর রহমান বিএনপির সমর্থক ও তার চাচা বিএনপি নেতা। এছাড়া ওই পত্রে সেতাব মাহমুদ নেশাগ্রস্ত, মাদক কারবারি ও কিশোর গ্যাং এর নেতা। তাকে যেন ছাত্রলীগের কোন পদে অধিষ্ঠিত করা না হয় তা উল্লেখ করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরিম হোসেন সীমান্ত পত্রটি পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত গত ২৪ জুন দলীয় প্যাডে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি পত্র পাঠান। ওই পত্রে সেতাব মাহমুদকে ছাত্রলীগের কোন পর্যায়ের কোন কমিটিতে নেতা নির্বাচিত না করার জোর সুপারিশ করেন।
এর আগে গত ১৮ জুন সন্ধায় টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হাসান স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে সদ্য বিদায় কমিটির নেতাকর্মীরা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। কমিটি ঘোষণার চার ঘন্টা পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি গঠনতান্ত্রিক নিয়ম ও বিধি অনুসরণ না হওয়ার কথা উল্লেখ করে বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
এ নিয়ে মির্জাপুরের রাজনৈতিক মহলে নানা-জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। পরে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগ এই তিন ইউনিটে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত আহবান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। নানা জল্পনা-কল্পনার পর গত শুক্রবার এই তিন ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
৬ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক শুভ আহমেদ জানান, তিনি বিবাহ করেননি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কনে পছন্দ করে রেখেছেন বলে জানান। উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক সেতাব মাহমুদ জানান, আমার বাবা একজন প্রবাসী। সে কোন দলের রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন খান জানান, ওয়ার্ড এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক লিখিত অভিযোগ থাকার পরও কিভাবে একজন বিএনপি সমর্থকের সন্তান উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক এবং শুভ আহমেদ বিবাহিত হয়েও যুগ্ম আহবায়ক নির্বাচিত হলেন তা আমার বোধগম্য নয়। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ জানান, লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও বিএনপি সমর্থকের ছেলেকে উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক নির্বাচিত করা হয়েছে। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, সেতাব মাহমুদকে আহবায়ক ও সাতজনকে যুগ্ম আহবায়ক করে তিন মাস মেয়াদী উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি ও এক বছর মেয়াদী পৌর ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সম্পাদকের নাম প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে।