নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল নারী ও শিশু আদালতের স্টেনো ও তার বাবা বিরুদ্ধে এক বৃদ্ধাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর আহত বৃদ্ধা হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও তিনি তার পরিবার নিয়ে রয়েছেন চরম আতঙ্কে। গত ৭ জুন বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের আইসরা উত্তরপাড়া গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় জড়িতরা হলেন- টাঙ্গাইল নারী ও শিশু আদালতের স্টেনো আবু তাহের আর তার বাবা মোহাম্মদ।
হামলার শিকার হয়ে আহত খুকি (৫৫) বলেন, আমাকে মারধর করেছে আবু তাহের ও তার বাবা মোহাম্মদ। আমি নাকি সড়কে ঘর দিয়েছি এবং জমির গাছ কাটার কথা বলে তাহেরের বাবা মোহাম্মদ হাতে থাকা লোহার বালতি দিয়ে আমার মুখে আঘাত করে। আঘাতটি আমার কপালে লেগে ফেটে গেছে।
বৃদ্ধার মেয়ে শাহানাজ বলেন, মোহাম্মদ লোহার বালতি দিয়ে মেরে, আমার মায়ের কপাল ফাটিয়ে দিয়েছে। এ সময় আবু তাহের তাকে লাথি মেরেছে। মাকে বাঁচাতে আমি এগিয়ে যাওয়ায় তারা বলেন, ফারুক তোদের মাইরা ফালাইলে তোরা কি করবি। আবু তাহের আদালতে চাকুরি করার ক্ষমতায় মাদক ব্যবসায়ি ফারুকের পক্ষ নিয়ে আমাদের উপর অত্যাচার শুরু করেছে। আমার বাবা অসুস্থ। মায়ের ওপর হামলার কঠোর বিচারসহ নিরাপত্তার দাবি করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবেশীর অভিযোগ, আবু তাহের টাঙ্গাইল নারী ও শিশু আদালতের স্টেনো হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এলাকার মাদক কারবারিদের নানাভাবে সহায়তা করছেন তিনি। যার কুফল ভোগ করেছেন অনেকেই। এখন ভোগ করছেন অসহায় প্যারালাইসিস রোগী শাহজাহানের পরিবার। নানাভাবে জমি দখলের শিকার হওয়াসহ প্রতিবেশী মাদক কারবারি ফারুকের অত্যাচার সইছে পরিবারটি। পাশে দাঁড়ানোর মত তেমন কোন পুরুষ মানুষ না থাকার সুযোগ নিয়ে ও মাদক কারবারি ফারুককে সহায়তা করতে পরিবারটির বিরুদ্ধে নানা ধরণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন আবু তাহের আর তার বাবা মোহাম্মদ।
এরই জের ধরে ও পরিবারটিকে আতঙ্কিত করতে বৃদ্ধা খুকির উপর হামলা চালানো হয়েছে। আবু তাহের ও তার বাবা মোহাম্মদ গ্রামের প্রভাবশালী আর ক্ষমতাধর হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে বা তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। নীরিহ পরিবারটির নিরাপত্তাসহ বৃদ্ধা নারীর উপর হামলার বিচার দাবি করেছেন তারা।
লোহার বালতি দিয়ে বৃদ্ধা খুকিকে আঘাত করার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত মোহাম্মদ। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতির দোহাই দিয়ে কোনরকম বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন টাঙ্গাইল নারী ও শিশু আদালতের স্টেনো আবু তাহের।
প্রতিবেশী মেহেদী হাসান ফারুক বলেন, প্যারালাইসিস রোগী শাহজাহান আমার চাচা আর খুকি আমার চাচি। মারধরের ঘটনায় আমি ছিলাম না। এছাড়াও সে সময় কেন আমার নাম বলা হয়েছে, সেটিও আমি জানি না।
স্থানীয় মাতাব্বর আবু সামা বলেন, বৃদ্ধা খুকিকে মারার ঘটনাটি দুঃখজনক। উভয়ের বাড়িতে গিয়ে আমি ঘটনার কারণ জেনেছি। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিমাংসা করতে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।
ফুলকী ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া জানান, বৃদ্ধার পরিবারটি নানাভাবে অত্যাচারিত। মারধরের বিষয়টি তার পরিবার থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। তবে মোহাম্মদ বা আবু তাহের এ বিষয়ে কোন কথা বলেননি। উভয়পক্ষ সম্মতি দিলে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, আদালত প্রাঙ্গণেও নানাভাবে বিতর্কিত টাঙ্গাইল নারী ও শিশু আদালতের স্টেনো আবু তাহের। সম্প্রতি আইনজীবীর মৃত্যুজনিত কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধের ওই দিনে অবৈধ প্রক্রিয়ায় একটি মামলার আসামীকে জামিন করার অপরাধে ইতোপূর্বে তাকে অন্যত্র বদলী করা হয়েছিল। আবু তাহের সেখানে কিছুদিন চাকুরী করার পর আবার টাঙ্গাইল নারী ও শিশু আদালতের স্টেনো হিসেবে যোগদান করেছেন।