নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে তামাক চাষ বেড়েছে। চাষের সঙ্গে জড়িত কৃষকরা দীর্ঘ মেয়াদে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বেশি লাভের আশায় তামাক চাষে ঝুঁকছেন। ফলে ফসলি জমি উর্বরতাও হারাচ্ছে। এ ছাড়া ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের নানা প্রলোভনে তামাক চাষে প্রান্তিক কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
জানা যায়, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে কালিহাতী, গোপালপুর, নাগরপুর, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল সদর ও দেলদুয়ার উপজেলায় বেশি তামাক চাষ হচ্ছে। টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে জেলায় তামাক চাষের কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও চরাঞ্চলের নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় তামাক চাষ হচ্ছে।
তামাক গাছের শুকানো পাতাকে তামাক বলা হয়। তামাক গাছ ১২-১৮ ইঞ্চি লম্বা হয়। নেশাদায়ক পদার্থ তামাকে আগুন দিয়ে সিগারেট, বিড়ি, চুরুট, হুঁকো, ও অন্যান্য ধুমপানের মাধ্যম প্রস্তুত করা হয়। ধুমপান ছাড়াও তামাক বিভিন্ন মাধ্যমে জর্দা, খৈনি, নস্যি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তামাকে প্রধানত বিশাক্ত পদার্থ নিকোটিন থাকে। এছাড়াও নানা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ থাকে। একটা সিগারেটে যতটুকু তামাক আছে তা শরীরে প্রবেশ করলে এতে দ্রুত মৃত্যু অনিবার্য। তবে ধুমপানের ফলেও ধীরে ধীরে আয়ু কমে আসে এবং হৃদরোগের জন্যও তামাকের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। তামাকের উচ্ছিষ্টাংশ হৃদপিন্ডে ঢুকে ক্যান্সারসহ মরণ ব্যাধি হতে পারে। আর এ কারণে অধিকাংশ লোকই নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
তামাক পাতা শুকানোর সময় উক্ত এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কাঠ, তুষ বা খড় পোড়ানোর ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়।
তামাক চাষ করার ফলে কৃষক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, টানা কয়েকদিন তামাক পোড়ানোর পর অনেক কৃষক এত বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তারা শয্যাশয়ী হয়ে পড়েন। তামাক পোড়ানো শেষে কৃষকের বমি বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট, শারীরিক দূর্বলতা দেখা যায় ।
এ ব্যাপারে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর এ এস এম সাইফুল্লাহ জানান, তামাক চাষের প্রক্রিয়া থেকে সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন এবং ব্যবহার পুরোটাই পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তামাক চাষে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা পানি ও বায়ুকে ভীষণভাবে দূষিত করছে। মাটি উর্বরতা হারাচ্ছে। বেশি লাভে তামাক চাষ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
টাঙ্গাইলের পরিবেশ উন্নয়নকর্মী সোমনাথ লাহিড়ী জানান, ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান দাদন দিয়ে কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে। গ্রামের অসহায় কৃষক না বুঝে তাদের জমি ও জীবনের চরম ক্ষতি করছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে গণসচেতনতা এবং তামাকজাত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা দরকার। যাতে আসক্তরা সহসাই কিনতে না পারে।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসানুল বাশার জানান, তামাক চাষের বিষয়ে সরকারিভাবে তাদের কোনো নির্দেশনা নেই। তাই এ ক্ষেত্রে তারা কোনো মতামত ও তামাক চাষে হস্তক্ষেপ করেন না।