
নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের সভাপতি কুদরত এলাহীকে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে টাঙ্গাইলে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সাবেক তদানিন্তন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার যোগসাজসে টাঙ্গাইল সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের সভাপতির পদ দখল করে দুর্নীতির মাধ্যমে ১১ কোটি ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে আজ শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইল শহরে সমবায় মার্কেটে ব্যবসায়ীরা সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় আমির কুদরত-ই-এলাহীর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী মালিক সমিতির পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাহেলা জাকির। তিনি বলেন, বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দখল করে নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের সভাপতি পদ দখল করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমির কুদরত-ই-এলাহী খান। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি ব্যাংকের মালিকানাধীন সমবায় সুপার মার্কেট ভবন উন্নয়নের নামে ভেঙে সেখানে ১০ তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সেখানকার ব্যবসায়ীদের নতুন ভবনে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে পুরোনো ব্যবসায়ী ও নতুন দোকান ক্রেতাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। নানা জটিলতায় আজও মার্কেট নির্মাণ হয়নি। এতে অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে গেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুদক তদন্ত করে কুদরত–ই–এলাহী এবং সমবায় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুলতান আলম খানের পরস্পরের যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে। দুদক তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সমবায় ব্যাংকের ১০ তলা শপিং কমপ্লেক্স প্রকল্পের দোকান গ্রহীতাদের কাছ থেকে অগ্রিম জামানত হিসেবে মোট ১১ কোটি ১৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা গ্রহণ করা হয়। পরে ওই টাকা কুদরত–ই–এলাহী খান চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। টাকাগুলো ঠিকাদারকে অগ্রিম দেওয়ার বানোয়াট ভাউচারের মাধ্যমে তিনি আত্মসাৎ করেছেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কুদরত–ই–এলাহী খান আত্মগোপনে আছেন। তাঁকে মুঠোফোনেও পাওয়া না যাওয়ায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। সরকার পতনের পর টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের সভাপতি পদ থেকে কুদরত–ই–এলাহীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে টাঙ্গাইল সমবায় সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির আহ্বায়ক রাহেলা জাকির আরও অভিযোগ করেন, সমবায় মার্কেটের পুরাতন ১৫৫ জন ও নতুন ১৫০ জন মোট ৩০৫ জন ব্যবসায়ীর দোকান বরাদ্ধ না দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে ফ্যাসিস্ট কুদরত এলাহী পালিয়ে গেছেন। আমরা দাবি জানাচ্ছি তিনিসহ তার সহযোগি কর্মকর্তা কর্মচারিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন এবং টাঙ্গাইল সমবায় ব্যাংক ও সমবায়ীদের সম্পদ রক্ষা করুন।
এদিকে, এসব অপকর্মের ঘটনায় দুর্নীতিবাজ কুদরত এলাহীসহ ১৪জনের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কার্যালয়ে পাঁচটি অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন, তদানীন্তন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সুলতান আলম খান (তিনি বর্তমানে চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলায় সমবায় কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত), রফিকুল ইসলাম, নাছির উদ্দিন, মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, শিপ্রা দেবনাথ, রেখা ইয়াসমিন, মোহাম্মদ ইমতিয়াজ রুহুল, আনছার সিকদার, শাহিনুজ্জামান, সিরাজুল ইসলাম, রতন কুমার দাস, শহিদুল্লাহ ভুইয়া ও দিদারুল ইসলাম মিয়া।