ঘাটাইলে চায়না দুয়ারি জালে বিপন্ন মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য

অপরাধ কৃষি ঘাটাইল পরিবেশ

ঘাটাইল প্রতিনিধি: ঘাটাইলে জেলেদের পাশাপাশি মৌসুমি মাছ শিকারি এবং সাধারণ মানুষ একধরনের চায়না রিং জালের ব্যবহার করায় দেশীয় মাছ বিলুপ্তি হচ্ছে। অঞ্চলভেদে চায়না দুয়ারি, ম্যাজিক জাল, রিং জাল নামে পরিচিত এই অবৈধ জাল ধ্বংসে প্রশাসনিক অভিযান, নজরদারি এবং সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম যথেষ্ট অপ্রতুল। এছাড়া, নদনদী ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য নানা কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

 

জানা যায়, নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি রিং বিশিষ্ট জাল সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা ও ৬০ থেকে ৯০ ফুট দৈর্ঘ্যের এবং ক্ষুদ্র ফাঁস বিশিষ্ট হয়। এটি লোহার রডের রিং দিয়ে খোপ আকারে বাক্স তৈরি করে চারপাশ সূক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘেরাও করে তৈরি। এ জালে অসংখ্য প্রবেশমুখ থাকায় দুদিক থেকেই মাছ ঢুকতে পারে। জালের ফাঁস ছোট হওয়ায় ছোট কোনো মাছই এর থেকে রেহাই পায় না।

ঘাটাইলে চায়না দুয়ারি রিং জালের ফাঁদে উজাড় হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। এতে ছোট পোনা আটকা পড়ে যা ফেলে দেন শিকারিরা। বিশেষ করে এটাতে ডিমওয়ালা মাছ ধরা পড়ায় স্বাভাবিক প্রজনন, বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধি হুমকিতে পড়েছে। এ ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী বিভিন্ন জলজপ্রাণী যেমন কাঁকড়া, সাপ, কুঁচিয়া, ব্যাঙ, ঝিনুক, শামুক, পোকামাকড়, কচ্ছপ, অণুজীব ইত্যাদির জীবনযাত্রাও এতে তুমুল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আকার ও মানভেদে একটি চায়না জালের দাম দুই থেকে দশ হাজার টাকা। কম দাম ও সহজলভ্যতার কারণে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে ঘাটাইলের গ্রামাঞ্চলে। উপজেলার হামিদপুর, সাগরদিঘী, গারো বাজার, ধলাপাড়া, পাকুটিয়াসহ বিভিন্ন হাট বাজারে অবাধে বিক্রি এ জালের। এমনকি বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও দূর-দূরান্ত থেকে অনায়াসে গোপনে এই জাল ঢুকে পড়ছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে।

উপজেলার টোক নদী, বংশাই নদী, চাপড়া বিল, দেওপাড়ার গোয়াপচা, গজারিয়া ও রাণাদহ বিল, কামারচালার মাইছা বিল, ধলাপাড়ার কালিয়ান বিল, রসুলপুরের ধলি ও আঠারচূড়া বিল, দিঘলকান্দির শেখশিমুল বিল, চিতাই খাল, নাগবাড়ি বিল, চ্যাংটা খাল, ভেকি টোকের খাল, গৌরাঙ্গী বিল, নেদার বিল, সংগ্রামপুরের মনপুরা এলাকায় শত শত চায়না জাল ব্যবহার করে প্রাকৃতিক মাছ ও জীববৈচিত্র্য অবাধে ধ্বংস করছে।

লোকেরপাড়া গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের আমিষের চাহিদা পূরণে মাছই একমাত্র উপাদান। একটা সময়ে নদীনালা, খালবিল, হাওর-বাঁওড়ে দেশীয় মাছের প্রাচুর্য ছিল। চায়না জালের কারণে বাঙালির জৌলুস হারিয়ে যেতে বসেছে।

ধলাপাড়া গ্রামের আজমত আলী বলেন, চায়না জালের প্রভাবে প্রাকৃতিক মাছের প্রাচুর্য কমছে। বিশেষ করে পানি বৃদ্ধি ও মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ এই চায়না জালে নিধন হচ্ছে। এতে ক্রমেই মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে জলাশয়। এসব জাল বন্ধ না হলে মৎস্য ভান্ডারে বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা রয়েছে।

কুড়িপাড়া গ্রামের মোতালেব হোসেন বলেন, এমন কোনো মাছ নেই যা এই জালে ধরা পড়ে না। যেখানেই একটু পানি জমেছে সেখানেই এই জাল পাতা হচ্ছে। নতুন পানিতে মা মাছ ডিম ছাড়ার আগেই ধরা পরে যাওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।

শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের উচিত এ জাল ব্যবহার রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা করা। সবাই যাতে এটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকে, সে ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। পাশাপাশি এর বিপণন ব্যবস্থা বন্ধ করা জরুরি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা খাদিজা খাতুন বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও নজরদারি সত্ত্বেও কিছু অসাধু মানুষ অজ্ঞতাবশত এসব অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছের প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য বাধাগ্রস্ত এবং ধ্বংস করছে। খোঁজ-খবর নিয়ে অবৈধ এই জাল ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *