মধুপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার আত্মহত্যা: মানববন্ধন

অপরাধ দুর্ঘটনা মধুপুর মানববন্ধন শিক্ষা

মধুপুর প্রতিনিধি: মধুপুর উপজেলার কেওটাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও ইডেন মহিলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী লুৎফুন্নাহার লাকী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত লুৎফুন্নাহার লাকী মধুপুর উপজেলার কুড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ মিয়ার বড় মেয়ে। স্বজনদের দাবি, গোপিনাথপুর সরকারি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ইবনে মাসুদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। লাকি বিয়ের কথা বললে মাসুদ জানায়, সে বিবাহিত, তার স্ত্রী-সন্তান রয়েছে এবং সে বিয়েতে অসম্মতি জানায়।

 

জানা যায়, গত ২৪ জুন রাত ১০টার দিকে লাকি নিজ বাড়িতে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষপানের কথা বুঝতে পেরে তাকে তৎক্ষণাৎ মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ২৭ জুন সকাল ১০ ঘটিকায় চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

এরই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় লাকির রুম থেকে পাওয়া ১১ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট। যেখানে মাসুদকে উদ্দেশ করে লেখা ছিল, তুমি জানতে তোমার বাসা থেকে বের হওয়ার পর আমি কোনো দুর্ঘটনা নিশ্চিত ঘটাব। তবু আটকালে না। তুমি চাচ্ছো আমি মরে যাই, আর তুমি জগৎ সংসারে ভালো থাকো। আমি এখন পোকার খাবার বিষ খাবো, আসার সময় কিনে এনেছি। আমার সঙ্গে যা করলে দুনিয়ার কোনো মানুষের সঙ্গে করো না প্লিজ। আমার মৃত্যুর জন্য তুমি দায়ী।

এ ব্যাপারে লাকির পিতা আব্দুল লতিফও বলেন, ‘আমি কৃষক মানুষ। অনেক কষ্ট করে ইডেন কলেজ পর্যন্ত পড়াইছি। বাড়ির কাছে চাকরি পাওনে খুবই খুশি হইছিলাম। সেই সুখ আমার সইলো না। হঠাৎ ২৪ তারিখ রাইতে তার চিৎকারে ঘরে গিয়ে দেখি বিষ খাইছে।’

এ বিষয়ে মো. ইবনে মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার কর্মস্থল মধুপুরের গোপিনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খান বলেন, আমি সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যমে কিছু বিষয় জানতে পেরেছি। ইবনে মাসুদ তিন দিনের জন্য ছুটি নিয়েছেন রোববার। তিনি বিদ্যালয়ে আসেননি। তার স্ত্রীর মাধ্যমে ছুটির আবেদন পাঠিয়েছেন।

লাকির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (২ জুলাই) কেওটাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়া, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মধুপুর উপজেলা চত্বরে এলাকাবাসী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও মানবাধিকার কর্মীরা এই ঘটনার দ্রুত বিচার ও অভিযুক্ত মাসুদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

এ বিষয়ে মধুপুর থানা ইনচার্জ এমরানুল কবীর রুবেল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন , বিয়ের প্রলোভন দিয়ে মাসুদ শিক্ষিকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং এক পর্যায়ে সে গর্ভবতী হলে মাসুদকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু সে বিয়ে করতে অপারগতা প্রকাশ করলে শিক্ষিকা লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আত্মহত্যার প্ররোচনায় দায়ে মাসুদের নামে মামলা হয়েছে, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *