বাসাইলের লাঙ্গুলিয়া নদীর উৎসমুখে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ

অপরাধ অর্থনীতি পরিবেশ বাসাইল

বাসাইল প্রতিনিধি: বাসাইলের লাঙ্গুলিয়া নদীতে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল বাঁধ দিয়ে মাছের চাষ করায় পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। নদীতে পানির অভাবে কৃষি খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। বাঁধের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তির পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি হলেও প্রভাবশালী মহল লাভবান হচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসন নীরব থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ অপসারণ করে নদীর উপর ব্রিজ বানিয়ে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ কমানোর দাবী জানিয়েছেন।

 

বাসাইলের প্রত্যন্ত অঞ্চল কাউলজানি ও মান্দারজানি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কাউলজানি পুরাতন বাজারের পাশে বংশাই নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া লাঙ্গুলিয়া নদীর উৎসমুখে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এরপর নদীর ভাঁটিতে এক কিলোমিটারের মধ্যে আরও তিনটি বাঁধ দিয়ে প্রভাবশালীরা বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই যুগ আগে উপজেলার কাউলজানি পুরাতন বাজার এলাকায় বংশাই নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া লাঙ্গুলিয়া নদীর উৎসমুখে নদীর দুপাড়ের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে তৎকালীন সংসদ সদস্য বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী সেতুর পরিবর্তে বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করেন। এরপর তার লোকজন সেখানে মাছের চাষ শুরু করেন। এরপর ক্ষমতার পালা বদলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দখলে নিয়ে এক যুগের বেশি সময় ধরে সেখানে মাছের চাষ করে আসছিলেন। ২০২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের পর এখন নতুন করে আরেকটি চক্র উক্ত স্থানটি দখলের চেষ্টায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

এদিকে, বংশাই নদীর পানি লাঙ্গুলিয়া নদী হয়ে বাসাইল উত্তরপাড়ায় মরাগাঙ্গী নদী ও কাশিল পূর্বপাড়ায় ঝিনাই নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। বাঁধের কারণে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকায় ভাটি এলাকার অর্ধশত গ্রামের কৃষিচাষে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বোরো ধান, পাট, মৌসুমি ফসল চাষ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নৌ-পরিবহনও বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা শিগগিরই বাঁধগুলো অপসারণ করে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছে।

কাউলজানি এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে দেশীয় মাছ কমে যাচ্ছে। গো-খাদ্য সংকটের পাশাপাশি পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে।’ একই কথা বলেন ওই এলাকার বাসিন্দা খসরু মিয়া, আবদুল খালেক, তোফাজ্জল ও শহীদ মিয়া।

লাঙ্গুলিয়া নদী তীরের বাসিন্দা কাউলজানি এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নদীর এই অংশটি ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় আমরা নদীর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আর যেন কেউ দখল বাণিজ্য করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া সেতু নির্মাণের আগ পর্যন্ত মসজিদের উন্নয়নের জন্য মসজিদ কমিটিকে মাছ চাষের অনুমতি দিতে প্রশাসনের কাছে দাবি করছি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. পান্নু মিয়া বলেন, এই বাঁধটি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বানিয়ে দিয়েছিলেন। এটি তার মনগড়া প্রকল্প ছিল। এই বাঁধটির কারণে মান্দারজানি, কাউলজানি, বাদিয়াজান, বার্থা, ফুলবাড়ীসহ অনেক গ্রামের মানুষ সমস্যায় পড়েছেন। বর্ষা মৌসুমে সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পানি না আসায় এ অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই বাঁধটি ভেঙে কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করলে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।

বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকলিমা বেগম বলেন, প্রচলিত আইন অনুযায়ী নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কোনো সুযোগ নেই। এটা আইনের লঙন। নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের যে বিষয়টি উঠে এসেছে, এটি মূলত টেকনিক্যাল বিষয়। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেলে টেকনিক্যাল টিম ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তর যারা আছে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করা হবে। যদি এই অভিযোগের ভিত্তি পাওয়া যায়, তাহলে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নদীর গতিপথ সচল করতে হলে সেখানে ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। এতে নদীর গতিপথ সচল হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *