
নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রীষ্মের তাপদাহে প্রাণীকূলের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত ঠিক তখনি প্রকৃতিকে অপরূপ সৌন্দর্য্যে সাজিয়ে রেখেছে সোনালু ফুল। টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন পথে প্রান্তরে ও বাড়ির আঙ্গিনায় শোভা বর্ধন করছে এই সোনালু ফুল। প্রচন্ড গরমে যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত তখন পথিকের মনে একটু প্রশান্তি দেয় সোনালু।
নারীর কানের ঝুমকা দুলের মত হালকা সবুজ পাতা ভেদ করে দক্ষিণা বাতাসে দুলছে হলুদ রঙের সোনালু। সোনাঝরা সোনালু ফুলের দিকে তাকালে তীব্র দাবদাহেও মনের ভিতর বহে শীতল বাতাস। মনে নেমে আসে প্রশান্তি। সোনালুর রূপের আগুনে জ্বলে উঠে পথিকের মন। তাৎক্ষণিক এই প্রেমকে বাঁচিয়ে তুলতে, রূপে মুগ্ধ হয়ে ছবি তুলতে ভুল করেন না পথচারী।
গ্রামবাংলায় এই সোনালু ফুল সোনালি, সোনাইল, বান্দরলাঠি ইত্যাদি নামে পরিচিত। পূর্ব এশিয়া থেকে আগত এই ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাশিয়া ফিস্টুলা। ইংরেজিতে একে গোল্ডেন শাওয়ার বলা হয়।
সোনালুর রূপের ছটা পড়েছে সাহিত্য পাড়ায়ও। মহাকবি কালিদাসের ‘মেঘদূত’ কিংবা ব্যাসের ‘ভগবত’ সবখানেই এই ফুলের গুণকীর্তন করা হয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ফুলের নাম দিয়েছিলেন অমলতাস। ইংরেজি নাম গোল্ডেন শাওয়ার ট্রি। হাজার বছর আগেও এ গাছ আমাদের উপমহাদেশে ছিল। এ গাছের বৈশিষ্ট্য হলো ঝাড় লণ্ঠনের মতো দীর্ঘ মঞ্জরি এবং উজ্জ্বল হলুদ ফুল। এ গাছের আদি নিবাস হলো ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ।
জানা যায়, সোনালুর রয়েছে নানাবিধ ঔষুধি গুণ। সোনালু গাছের পাতা ও বাকল ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ। যা ডায়রিয়া ও বহুমূত্র রোগে ব্যবহৃত হয়। শোভাবর্ধক উদ্ভিদ হিসেবে এর পরিচিতি থাকলেও এর ঔষধি গুনাগুণ অনেকেরই অজানা। আয়ুর্বেদিক, ইউনানি এবং চাইনিজ ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনে এই উদ্ভিদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাতা জীবাণুনাশকের জন্য খুবই প্রসিদ্ধ। বিভিন্ন চর্মরোগ, ক্ষত শুকাতে, শরীরের ইনফেকশন রোধে, কীটপতঙ্গের কামড় ও চামড়ায় জ্বালা-পোড়া বন্ধ করতে, গ্যাস্ট্রিক, এজমা ও ডায়রিয়া রোধে এর পাতার রস সেবন, পাতা রান্না করে ও বাহ্যিকভাবে পাতার রস ব্যাবহার করা হয়। টনসিলের সমস্যায় ফুলা কমাতে এই উদ্ভিদের পাতা গরম করে ছেক দেওয়া হয়।
ফুল শাকের মতন রান্না করে খাওয়া হয়। ফুলের এন্টি-ফাংগাল (Ringworm রোগ) ও এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুনাগুণ রয়েছে। এর বীজ এন্টি-ক্যান্সার ও এন্টি-টিউমারের জন্য খুবই জনপ্রিয়। কসমেটিকস ইন্ড্রাস্টিতে রূপ ধরে(Anti-ageing) রাখার জন্য এর বীজ ব্যাবহার করা হয়। এর বীজ থেকে প্রাপ্ত ঘাম খাবারের গুনাগুণ, সেলফ-লাইফ (Shelf life) বৃদ্ধি ও খাবার প্রিজারভেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
বিভিন্ন ফ্লু জনিত জ্বর ও ঠাণ্ডার জন্য এর শেকড় খাওয়া হয়। সোনালু কাঠের রং টকটকে লাল। এর কাঠ ও অনেক মজবুত। ঢেঁকি, সাঁকো, বাড়িঘর তৈরি ও জ্বালানি হিসেবে এর কাঠ ব্যাপক সমাদৃত।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক মোহাম্মদ সিরাজ আল মাসুদ বলেন, সোনালু ফুলের ঝাঁকড়া সৌন্দর্য প্রকৃতিকে যেন এক সোনালী স্বপ্নে মোড়া দেয়। রোদেলা দিনে এর ঝুলন্ত ফুলরাজি চোখ জুড়িয়ে দেয়, মন ভরে যায় প্রশান্তিতে। প্রকৃতির এই নিঃস্বার্থ উপহার আমাদের মনে জাগায় ভালোবাসা ও সৌন্দর্যবোধ। তাই, সোনালু যেন প্রকৃতির রঙিন কবিতা।