
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপসহ নানা কারণে আসন্ন ঈদে যানজটে চরম ভোগান্তির শঙ্কা করছেন বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা। তবে, ঈদে ঘরমুখো মানুষ চার লেনের সুবিধা পাবেন বলে দাবী করেছেন প্রকল্প ম্যানেজার।
যমুনা সেতু সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হতে ২০ হাজার যানবাহন পারাপার করে। বিগত ঈদে ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ হাজারের বেশি যানবাহন সেতু পারাপার করেছে।
মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও তদারকির অভাবে টাঙ্গাইল অংশে কাজের ধীরগতি। এছাড়াও উত্তরাঞ্চলসহ আশপাশের ২৩ জেলার লাখ লাখ মানুষ মহাসড়কটি ব্যবহার করেন। আসন্ন ঈদে চারলেনের কাজ শেষ না হওয়ায় কয়েক গুণ বেশি যানবাহনের চাপসহ নানা কারণে চরম ভোগান্তি শঙ্কা করছেন তারা।
সাসেক-২ প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ফেইজ ৫ অংশে চার বছরে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। ২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পর ২০২১ এর ডিসেম্বরে এই অংশের কার্যাদেশ পায় আব্দুল মোনায়েম নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ কাজ বাকি রয়েছে। ঈদে মহাসড়কের চারলেন চালুর কথা বললেও বেশির ভাগ অংশে মূল সড়কের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যমুনা সেতুতে টোল আদায়ের সফটওয়ারে সমস্যার কারণে অনেক সময় টোল আদায় দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে। ফলে দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকা থাকে। অপরদিকে, যমুনা সেতু পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ অংশে গাড়ি ঠিকমতো পাস না হলে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। গত কয়েক ঈদেও সিরাজগঞ্জের অংশে গাড়ি ঠিকমতো পাস না হওয়ার কারণে যমুনা সেতুতে টোল আদায় বন্ধ থাকে। এতে করে টাঙ্গাইলের অংশে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। প্রতি বছরই ঈদকে সামন রেখে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সড়কে লক্কড়ঝক্কড় এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের করেন। এসব গাড়ি হঠাৎ করেই মহাসড়কে বিকল হয়ে যায়। এতে সড়কের উভয় পাশের গাড়ি থেমে যায়। এক পর্যায়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক সময় চালকের অদক্ষতা, সড়ক দুর্ঘটনা এবং গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় যানজট হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কের সল্লা, আনালিয়াবাড়ী ও ভাবলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এলেঙ্গা-ভূঞাপুর-চরগাবসারার সড়কও সংস্কার করা হচ্ছে।
উত্তবঙ্গের গাড়ী চালকরা জানান, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন ও বেপরোয়া গতির যানবাহন কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সড়কে গাড়ি বিকল হলেও যানজট দেখা দেয়। যে কারণে মহসড়কে যানজট নিরসনে পুলিশকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মহাসড়কের পাশে বালু রয়েছে। একটু বৃষ্টি বা অন্য কোন পানি পেলে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু সড়কে মাঝে মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।
এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত চারলেন সড়কের কাজ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার রবিউল আওয়াল বলেন, এই মহাসড়কের ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ঈদের আগেই মহাসড়কের এই অংশের উত্তরঙ্গগামী লেন যান চলাচলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। আশা করছি, আগামী ১৮ তারিখ থেকে এই লেনে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ঈদযাত্রায় যমুনা সেতু দিয়ে সার্বক্ষণিক টোল চালু রাখার চেষ্টা করা হবে। এবার সেতুর দুই প্রান্তে ৯টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হবে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য দুইটি করে আলাদা বুথ থাকবে। যাতায়াতের সুবিধার্থে সেতুর ওপরে অব্যবহৃত রেললাইনের সাড়ে ৩ মিটার জায়গাও প্রসস্থতা বাড়ানো হবে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছি। টাঙ্গাইলের অংশে ৬৫ কিলোমিটারে জেলা পুলিশের সাড়ে ৭শত সদস্যসহ মহাসড়কে মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করবেন। মহাসড়ককে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। আগামী ২৫ মার্চ থেকে মহাসড়কে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে। ঈদের পরও যানজট নিরসনে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। আশা করছি মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হবে না।”