কালিহাতী উপজেলায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলছে অবৈধ ৪০টি বালুমহাল

অপরাধ আইন আদালত কালিহাতী পরিবেশ

কালিহাতী প্রতিনিধি: কালিহাতী উপজেলায় সরকার অনুমোদিত কোনো বালু মহাল না থাকলেও রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে প্রায় ৪০টি অবৈধ বালুঘাট গড়ে ওঠায় এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী, সল্লা ও এলেঙ্গা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এসব বালু মহাল গড়ে উঠেছে, যা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে দিব্যি চলছে।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনা সেতু পূর্ব থানার থানাঘাট, শ্যামশৈল, বিনোদ লুহুরিয়া, সরাতৈল, বল্লভবাড়ী, বিয়ারা মারোয়া, জোকারচর, কদিম হামজানী, কামাক্ষ্যার মোড়, সল্লা চরপাড়া, ধলাটেংগর, ভাবলা, কুড়িঘরিয়া এলাকায় চোখে পড়ে একের পর এক বালুর চাতাল। প্রতিটি ঘাটেই চলছে ড্রেজার, ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও বালুবাহী ট্রাকের ব্যস্ত আনাগোনা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুস ছালাম ও তার সহযোগী রহমত উল্ল্যাহ বল্লভবাড়ী-বিয়ারা মারোয়া এলাকায় বালু উত্তোলন ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এছাড়া, টাঙ্গাইল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতার নাম ব্যবহার করে উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি পরিচয়ের সোলায়মান আকন্দ এবং ক্যাশিয়ার আব্দুল লতিফ আকন্দও একইভাবে অবৈধ বালু ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরাতৈল এলাকার মন্ডলবাড়ী বালুঘাট পরিচালনা করছেন ছাত্রদল পরিচয়দানকারী ইমরান হোসেন তালুকদার, কামরুল যাদের সঙ্গে রয়েছেন বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন, নজরুল ইসলাম বিদ্যুত এবং পটল এলাকার একজন স্কুল শিক্ষকসহ আরও কয়েকজন।

উপজেলার কামাক্ষ্যার মোড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় পরিচালিত আরেকটি বালু মহাল স্থানীয়ভাবে কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজনু মিয়ার নামে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ধলাটেংগরে ‘বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ’ পরিচালনা করছেন খন্দকার আল আমিন। একই এলাকায় কছিম উদ্দিনের নামে আরেকটি বালুঘাটের পেছনে আলাল, মিনু, বাতেন, ফরহাদ সরকার, সোহেল, বাবুসহ আরও বহুজনের নাম উঠে এসেছে। এছাড়া, এ এলাকায় আসাদুজ্জামান আসাদ নামে এক ব্যক্তিও পরিচালনা করছেন একটি বালুঘাট।

বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ১০ ধারায় বলা আছে ইজারা ছাড়া বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সরকারি স্থানে বা জনসাধারণের রাস্তায় বালু স্তূপাকারে রাখা যাবে না। আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু এসব আইনের তোয়াক্কা না করেই চলছে ব্যবসা। ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক ও কৃষিজমি। ধুলাবালুর কারণে স্থানীয়দের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে, কালিহাতী উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি নজরুল ইসলাম মোবাইলে জানান, ইমরান ও কামরুল ছাত্রদলের কেউ নয়। কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মজনু মিয়া দাবি করেন, তিনি বালু ব্যবসার সাথে জড়িত নয়।

এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.খাইরুল ইসলাম জানান, বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অবৈধ বালুমহালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

স্থানীয়রা বলছেন, শুধু অভিযান নয়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িতদের পরিচয় ও প্রভাব নির্বিশেষে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত এলাকার পরিবেশ, সড়ক এবং জনজীবন নিরাপদ হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *