মধুপুরে আনারসের বাম্পার ফলনে কৃষক লাভবান হয়েছে!

অর্থনীতি কৃষি মধুপুর

মধুপুর প্রতিনিধি: মধুপুরের গড় অঞ্চলে এবার আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে এ বছর দাম ভালো পাচ্ছেন কৃষক। বাজারে আনারসের দামও বেশ ভালো হওয়ায় খুশি তারা। পাইকার ক্রেতা বেশি থাকায় বাজারে প্রচুর আনারসের আমদানি থাকলেও দাম পড়েনি। গরমের কারণে এ বছর আনারসের চাহিদা বেড়েছে এবং দাম ভালো পাওয়ায় আনারসের আবাদও বেড়েছে বলে জানান চাষী। এদিকে, আনারস চাষে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।

 

পাইকাররা বলছেন, মোকামগুলোর বাজার তুলনামূলকভাবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে। ফলের মোকামে চাহিদা বেড়েছে। গরম বেশি থাকার কারণে চাহিদা বেশি। কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর মধুপুর গড়ে আনারসে ৭৬০ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা আছে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে মধুপুরে ৬ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৯২ হেক্টরে জলডুগি এবং ৪ হাজার ২২০ হেক্টরে ক্যালেন্ডার প্রজাতির আনারস চাষ হয়েছে। এ ছাড়া ফিলিপাইন থেকে আমদানি করা জাত এমডি-টু ১৮ হেক্টর চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন ধরা হয়েছে ক্যালেন্ডার ৩৮ মেট্রিক টন, জলডুগি ২৭ মেট্রিক টন ও এমডিটু ৩৫ মেট্রিক টন।

 

মধুপুর উপজেলার আউশনারা ইউনিয়নের ভেরেনা সাংমা ষাটের দশকের শেষদিকে ভারতের মেঘালয় থেকে কয়েকটি জায়ান্টকিউ জাতের আনারসের চারা আনেন। সেগুলো মধুপুর গড়ে রোপণ করেন। প্রথমবারেই ভালো ফলন হয়। খেতেও সুস্বাদু ছিল। পরে আরও বেশি জমিতে আনারস চাষ করেন। তার দেখাদেখি অন্যরাও আনারসের আবাদ করতে থাকেন। এরপর মধুপুর গড়ের মাটি আনারস চাষে উপযোগী হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে আনারস চাষাবাদ। ফলন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। মধুপুরের পাশাপাশি ঘাটাইলের পাহাড়ি এলাকায় আনারস প্রচুর চাষ হয়েছে।

সম্প্রতি লাল মাটির আনারস জিআই পণ্য হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে খুশি চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এ আনারস এখন মধুপুরের অর্থনীতির প্রধান উৎস হিসেবে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার আনারস বেচাকেনা হয়ে থাকে। প্রায় ৬ মাস কম-বেশি চলে বেচাকেনা।

জানা যায়, মধুপুর গড়ের জলছত্র হচ্ছে আনারসের সবচেয়ে বড় বাজার। এ ছাড়া মোটের বাজার ও গারো বাজারও আনারস বেচাকেনার জন্য বড় বাজার। এসব বাজারে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকার আসেন আনারস কিনতে। এ বছর ভরা মৌসুমে পাইকার অনেক। আশপাশের ময়মনসিংহ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, বরিশাল, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকার আসেন। প্রতিদিন জমজমাট বাজারে প্রচুর বেচাকেনা হয়।

জলছত্র বাজারের আনারস চাষি শাহীন বলেন, গত কয়েক দিন ধরে বাজার ভালো যাচ্ছে। কয়েক দিন আগে ৪০ টাকা বিক্রি হতো। এখন ২-৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাইকার চাহিদা বেশি থাকায় এমন হচ্ছে বলে ধারণা করছি।

সুরুজ আলী বলেন, আনারসের একটি চারার দাম ৪-৫ টাকা। রোপণ খরচ এক টাকা, পাতার ঢাক খরচ, নিড়ানি খরচ, সার, বিষ খরচ, রোদে পোড়া থেকে রক্ষার ঢাক, পাকানো ও কর্তন খরচ নিয়ে ১৫-১৮ টাকা পড়ে যায়।

শামসুল হক বলেন, যেখানে ছোট ট্রাকের ভাড়া ছিল ৫-৬ হাজার টাকা। এখন ৭-৮ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। ভাড়া বৃদ্ধি থাকলেও ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আনারসের দাম বেড়েছে।

স্থানীয় ট্রাক ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সদস্য বেলাল বলেন, মধুপুর থেকে প্রতিদিন শতাধিক ছোট-বড় আনারসের গাড়ি বিভিন্ন জেলায় যায়। বাজার ছাড়াও বাগান থেকেও সরাসরি ট্রাকে উঠানো হয়। সড়ক পাকা থাকায় গ্রামের ভেতরে বাগানেও গাড়ি যায়। বাগান থেকেও মোকামে যাচ্ছে আনারস।

জলছত্র ট্রাক ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, এ বাজার থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আনারসের সমাগম ঘটে। চালক, ব্যাপারীসহ বাজারে আসা মানুষের জন্য অফিসেই কম খরচে থাকার সুব্যবস্থা করেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, এ গড়ের সবচেয়ে বড় বাজার জলছত্র। দোকানপাট থেকে শুরু করে কুলি, হকার, শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে বাজারটি। সরগরম থাকার কারণে বেচাকেনাও বেড়ে যায়। স্থানীয় অর্থনীতির চাকা সচল থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক আশেক পারভেজ জানান, টাঙ্গাইল আনারস উৎপাদনের অন্যতম জেলা। ২০০ চাষিকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর আনারসের দাম ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।

তিনি আরো বলেন, কৃষকেরা আনারস দ্রুত পাকানোর জন্য অতিরিক্ত হরমোন ব্যবহার করেন। যাতে কৃষকেরা এটি না করেন, তার জন্য পর্যবেক্ষণ করছি। এমডি-২ জাতের আনারস বিদেশ থেকে আমদানি করা। এর সংরক্ষণ বেশিদিন করা যায়। এ জাতের আনারস যাতে রপ্তানি করা যায়, সেই চেষ্টা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *