
নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল পৌরসভার গ্রাহকদের চাহিদার তুলনায় সাপ্লাই লাইনের পানির সরবরাহ নেই। ফলে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে টাঙ্গাইল পৌরবাসীর এক বৃহৎ অংশ।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌরসভার মোট ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২, ৪, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো পানির সাপ্লাই লাইনই নেই। আবার ১, ৩, ৫, ৭, ১২, ১৫ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে আংশিকভাবে সংযোগ রয়েছে। তবে ৬, ১১, ১৩, ১৪, ১৬ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে পুরোপুরি সংযোগ থাকলেও পানির চাপ অত্যন্ত কম।
বর্তমানে পৌরসভার অধীনে রয়েছে তিনটি উচ্চ জলাধার ও চারটি পানি পরিশোধন কেন্দ্র (ট্রিটমেন্ট প্লান্ট)। এর মধ্যে কলেজ পাড়ায় একটি উচ্চ জলাধার ও দুটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বাগান বাড়িতে একটি জলাধার, সাবালিয়ায় একটি জলাধার ও একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং কাগমারীতে একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট রয়েছে। এ ছাড়াও জেলা সদর মাঠ সংলগ্ন একটি পানির ট্যাংক থেকেও সরবরাহ চালানো হয়।
প্রতিটি সংযোগের জন্য নির্ধারিত মাসিক বিল হলো ০.৫ ইঞ্চি ব্যাস: ২৫০ টাকা, ০.৭৫ ইঞ্চি ব্যাস: ৬০০ টাক, ১ ইঞ্চি ব্যাস: ১,৬০০ টাকা, ১.৫ ইঞ্চি ব্যাস: ৩,৬০০ টাকা, ২ ইঞ্চি ব্যাস: ৭,২০০ টাকা। পানি সরবরাহ কেন্দ্রের জনবল হিসেবে রয়েছে ১৭ জন স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ৩৩ জন দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারী।
পানি সরবরাহ শাখার জুন মাসের চাহিদা ও আদায় বিবরণী অনুযায়ী, প্রতিদিন টাঙ্গাইল পৌরসভায় পানির চাহিদা ২ কোটি ৫০ লাখ লিটার, কিন্তু সরবরাহ হয় মাত্র ৯৩ লাখ লিটার। এতে প্রতিদিন ঘাটতি থাকে ১ কোটি ৫৭ লাখ লিটার। প্রতিদিন মোট ১ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানি পরিশোধন করা হলেও এর মধ্যে ১৫ লাখ লিটার ব্যাক ওয়াশে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে পৌর এলাকায় রয়েছে ১৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন এবং ৪৫০০টি বিভিন্ন ব্যাসের সংযোগ। এর মধ্যে ০.৫ ইঞ্চি ব্যাসের সংযোগ ৭,৪৮২টি।
পানি সরবরাহ শাখার সহকারী প্রকৌশলী এ. এইচ. এম. জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, রেজিস্ট্রার অনুযায়ী মোট গ্রাহকের সংযোগ সংখ্যা ৮,১৭৬ হলেও বর্তমানে চালু রয়েছে মাত্র ৪,৫০০টি সংযোগ। তিনি আরো বলেন, চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে হলে আমাদের উচ্চ জলাধার ও ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বাড়াতে হবে।
শহরের পূর্ব আদালত পাড়ার বাসিন্দা মো. রুবেল মিয়া জানান, সংযোগ লাইনে ঠিকমতো পানি আসে না। আর যা আসে তাও ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। এ জন্য আমি নিজের বাসার সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছি।
পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম আকুর টাকুর পাড়া এলাকার বাসিন্দা রহম আলীর বাড়িতে পৌরসভার সাপ্লাই পানির সংযোগ থাকলেও গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেই লাইনে পানি আসছে না। তবুও প্রতি মাসে নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে তাকে।
দেওলা এলাকার তুষার আহমেদ লাবু বলেন, আমরা এখনো পৌরসভার সাপ্লাই পানির সংযোগ পাইনি। অথচ এই সংযোগ নাগরিক অধিকার।
টাঙ্গাইলের কলেজ শিক্ষক তরুণ ইউসুফ বলেন, প্রতিবেশীদের কাছে প্রায়ই শুনি, সাপ্লাই লাইনের পানি যথেষ্ট আসে না। এটা সত্যিই উদ্বেগজনক।
শহরের আকুর টাকুর পাড়ার রাইহান মিয়া বলেন, গভীর নলকূপ স্থাপন অনেক ব্যয়বহুল, যা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। পৌরসভার জলাধারে পরিশোধিত গভীর নলকূপের পানি আমরা ব্যবহার করতে চাই, কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নেই।
টাঙ্গাইল পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার টাঙ্গাইলের উপ-পরিচালক মো. শিহাব রায়হান বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরই বুঝতে পারি, বিভিন্ন এলাকায় পানি সরবরাহের সঠিক ব্যবস্থা নেই। তাই আমি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ ‘ইনক্লুসিভ স্যানিটেশন প্রজেক্ট’-এর আওতায় ২০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন এবং আরও চারটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণের কাজ শুরু হবে। আশা করছি, প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে টাঙ্গাইল শহরের পানি সংকট অনেকটাই দূর হবে।