
নিজস্ব প্রতিবেদক: কালিহাতীর গোবিন্দ পাল নামের শিক্ষার্থীএবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অর্থের অভাবে আদৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
গোবিন্দ কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌর এলাকার গোপাল পাল ও মিনতি রানী পালের ছেলে। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় ছেলেকে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচের ব্যবস্থা করবেন, তা নিয়ে দিশেহারা ওই দম্পতি।
জানা যায়, লেখাপড়ায় বরাবর মেধাবী গোবিন্দ পাল এবার নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ১৬ হাজার টাকা লাগবে। ভর্তির এই টাকা কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল ইসলাম দিয়েছেন। ভর্তির টাকার ব্যবস্থা হলেও নোয়াখালী যাওয়ার এবং ক্লাস শুরুর পর সেখানে থাকা–খাওয়ার খরচের চিন্তা গোবিন্দের পিছু ছাড়ছে না।
সরজমিনে এলেঙ্গা হাইস্কুল এলাকায় গোবিন্দদের বাড়িতে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ছোট একটি ঘরে গোবিন্দ ও তাঁর মা-বাবার বসবাস। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মাটির হাঁড়ি তৈরির সরঞ্জাম। কিছু হাঁড়ি তৈরি করে পোড়ানোর জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর বাবা গোপাল পাল জানান, তাঁর নিজের কোনো জমিজমা নেই। এলেঙ্গাতে অন্যের জায়গায় ঘর তুলে বাস করছেন। ওই জায়গাতেই তিনি মাটি দিয়ে দইয়ের হাঁড়ি তৈরি করেন। তা বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে দিন চলে যায়। ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারেন না।
গোবিন্দ ঘাটাইল শহীদ সালাউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন ২০২৩ সালে। ২০২১ সালে এলেঙ্গা হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায়ও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। দরিদ্র মেধাবী ছাত্র হওয়ায় তাঁকে স্কুলে কোনো বেতন দিতে হতো না। স্কুল ও কলেজের শিক্ষকেরা বিনা বেতনে তাঁকে ব্যাচে পড়াতেন।
গোবিন্দের বাবা গোপাল পাল আরো বলেন, ‘এই পোলার লেহাপড়ার পিছে টাকা ভাঙবার পারি নাই। স্কুল–কলেজের মাস্টাররা বিনা বেতনে পড়াইছে। তাই ভালো ফল করছে। এহন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য টিকছে। তার সেহানে পড়ানোর খরচ কনে পামু।’ মা মিনতি রানী পাল বলেন, ‘আমার এই পোলারে পড়াবার খরচ কনে পামু, হেই চিন্তায় বাঁচি না।’
এ বিষয়ে গোবিন্দ পাল বলেন, ‘৭ আগস্ট ভর্তির তারিখ, তার পরের সপ্তাহেই ক্লাস শুরু হবে। ভর্তির টাকা কালিহাতীর ইউএনও স্যার দিয়েছেন। এ ছাড়া কোনো টাকাপয়সা নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।’
এলেঙ্গা লুৎফর রহমান মতিন মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক কাশীনাথ মজুমদার জানান, দারিদ্র্যের মধ্যেও অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে গোবিন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। অর্থের অভাবে তার উচ্চশিক্ষা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। সরকারি, বেসরকারি বা ব্যক্তিপর্যায় থেকে কেউ সহযোগিতা করলে এই অনিশ্চয়তা কেটে যেতে পারে।