
সখীপুর প্রতিনিধি: সখীপুর উপজেলার লাল মাটির পাহাড়িয়া অঞ্চলে উৎপাদিত সুস্বাদু কাঁঠালের চাহিদা সারা দেশে। শুধু কাঁঠাল বিক্রির জন্য এখানে বসে বড় বাজার। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসব বাজার থেকে কাঁঠাল কেনেন। এ উপজেলা থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় কোটি টাকার কাঁঠাল ঢাকাসহ দেশের নানা অঞ্চলে যাচ্ছে।
তবে হাটগুলোতে কাঁঠালের ব্যাপক বেচাকেনা হলেও দাম নিয়ে অসন্তুষ্ট কৃষক ও খুচরা বিক্রেতারা। গাছ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ, পরিবহন ও বাজারে আনতে যে খরচ হয়, বিক্রির পর হাতে তেমন কিছুই থাকে না বলে অভিযোগ করেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, উপজেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কাঁঠালগাছ রয়েছে। বাড়ির আঙিনার এসব গাছ থেকেই প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল উৎপাদন হয়। উপজেলার কুতুবপুর, বড়চওনা, কচুয়া, মহানন্দপুর, নলুয়া, তক্তারচালা ও দেওদীঘি—এ হাটগুলোতে কাঁঠালের বেচাকেনা বেশি হয়।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, কুতুবপুর হাট সারা বছর কলার জন্য পরিচিত থাকলেও জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত কাঁঠালের হাটে রূপ নেয়। হাটটি বসে শনি, রোব, মঙ্গল ও বুধবার। বড়চওনার হাট সোমবার, নলুয়ার হাট বৃহস্পতিবার, দেওদীঘি সোমবার, তক্তারচালা শনিবার, কচুয়া রোববার ও বুধবার এবং মহানন্দপুর হাট বসে মঙ্গলবার। একেকটি হাটে সপ্তাহে গড়ে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার কাঁঠাল কেনাবেচা হয়। সব মিলিয়ে সখীপুর থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় কোটি টাকার কাঁঠাল যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
সম্প্রতি বড়চওনা, কুতুবপুর, কচুয়া, নলুয়া, দেওদীঘি, তক্তারচালা ও বহেড়াতৈল হাটে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে ঘুরে ঘুরে একদল ক্রেতা কাঁঠাল কিনছেন। সেগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছে সড়কের পাশে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা আরেক দল ক্রেতা তাঁদের কাছ থেকে কাঁঠাল পাইকারি কিনে নিচ্ছেন।
বড়চওনা বাজারে দেখা যায়, সাগরদীঘি-ঢাকা সড়কের দুই পাশে শত শত ভ্যানগাড়িতে কাঁঠাল ভর্তি করে বিক্রির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন লোকজন। পাইকারি ক্রেতারা কাঁঠাল কিনে স্তূপ করে রেখেছেন। সন্ধ্যা হলেই সেগুলো ট্রাকে তোলা হবে। এ ছাড়া সড়কের পাশে একেকটি গাড়িতে মাঝারি আকারের ২০ থেকে ৫০টি কাঁঠাল রয়েছে। পাইকারেরা ভ্যানগাড়িতে থাকা কাঁঠালগুলোর আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করে দর-কষাকষি করছেন।
কাঁঠালের এই হাটকে কেন্দ্র করে চার মাস ধরে দুই থেকে আড়াই শ মানুষের কর্মসংস্থান হয় বলে জানালেন বেশ কয়েকজন আড়তদার। তাঁরা বলেন, কেউ মাঠপর্যায়ে কাঁঠাল কেনেন, কেউ আবার সেগুলো ভ্যানগাড়িতে বহন করেন। অনেকেই চুক্তিভিত্তিক কাঁঠাল কেনার কাজে নিয়োজিত। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকারদের কাঁঠাল ট্রাকে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য প্রচুর শ্রমিক কাজ করেন এখানে।
কচুয়ার হাটে কাঁঠালের পাইকারি বিক্রেতা মো. আক্কাস আলী বলেন, মাঝারি আকারের ১০০ কাঁঠালের লট বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দরে। খুব বড় আকারের কাঁঠালের ক্ষেত্রে লটপ্রতি দাম ৭ থেকে ৯ হাজার।
উপজেলার মহানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলী বলেন, এ বছর কাঁঠালের উৎপাদন তুলনামূলক ভালো। তিনি কাঁঠাল ছোট থাকা অবস্থায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে কিছু গাছ হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছেন। বেশ কিছু গাছের কাঁঠাল এখন বিক্রি হচ্ছে। তিনি এ বছর এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করেছেন।
স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ী বাবলু মিয়া জানান, তাঁরা এ অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কাঁঠাল কিনে বিভিন্ন হাটে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। প্রতিটি কাঁঠাল আকারভেদে ৩০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা তা ২০ থেকে ৬০ টাকায় সংগ্রহ করেন।
কুতুবপুর হাটের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান জানান, শনিবার বিকেল থেকে রোববার দুপুর এবং মঙ্গলবার বিকেল থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত কৃষক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কাঁঠাল আনেন। পরে পাইকাররা কিনে নিয়ে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যান। ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানান, প্রতি হাটে এখান থেকে ১৫-২০ ট্রাক কাঁঠাল বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
রাজধানী ঢাকা থেকে কাঁঠাল কিনতে আসা পাইকারি ক্রেতা আব্দুল হালিম বলেন, এ অঞ্চলের উৎপাদিত কাঁঠাল সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা বেশি। তিনি প্রতি সপ্তাহে এক ট্রাক কাঁঠাল (আনুমানিক ২ হাজারটি) কিনে ঢাকায় নিয়ে যান। সপ্তাহজুড়ে বিক্রি করে আবার কিনতে আসেন। এভাবে আর এক দেড় মাস এ ব্যবসা করবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন বলেন, সখীপুর পাহাড়িয়া অঞ্চলের লাল মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কাঁঠালের প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে গবেষণা চলছে। কাঁঠাল নিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করতে ইতিমধ্যে শতাধিক কিষান-কিষানিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই এলাকার কাঁঠাল সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারেরা এখান থেকে কাঁঠাল নিয়ে যাচ্ছেন।