
নিজস্ব প্রতিবেদক: কালিহাতী উপজেলার আউলিয়াবাদ এলাকার জেলা পরিষদের কমিউনিটি সেন্টার কাম মাল্টিপারপাস হলে ঈদের দিন থেকে চালানো ‘তাণ্ডব’ সিনেমা পুনরায় নিরাপত্তার সাথে প্রদর্শন চালুর জন্য প্রশাসনের অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আয়োজকবৃন্দ।
জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে কামরুজ্জামান সাইফুল ও সাজু মেহেদীর উদ্যোগে স্থানীয় কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মী জেলা পরিষদের হলটি ভাড়া নিয়ে ‘তাণ্ডব’ ছবিটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু পারকি ইউনিয়ন ওলামা পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলের পর ‘তাণ্ডব’ চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধের দাবি জানানো হয়। এরপর নিরাপত্তাহীনতার কারণে গত মঙ্গলবার থেকে ছবিটির প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধের খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন নির্মাতা আশফাক নিপুন। ছবির প্রদর্শনী বন্ধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারে দ্রুত অন্তর্বর্তী সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি ছবিটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার আহ্বানও জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঈদ উপলক্ষে কামরুজ্জামান (সাইফুল) ও সাজু মেহেদীর উদ্যোগে স্থানীয় কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মী জেলা পরিষদের হলটি ভাড়া নিয়ে ‘তাণ্ডব’ ছবিটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। তবে এ উদ্যোগের বিরোধিতা করে গত শুক্রবার বিকেলে পারকি ইউনিয়ন ওলামা পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। সেখান থেকে চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধের দাবি জানান। আন্দোলনকারীদের একজন মাওলানা আবদুল্লাহ বলেন, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানে ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া অসামাজিক কার্যকলাপ হতে পারে। সে জন্য হলটিতে সিনেমা প্রদর্শন বন্ধের জন্য বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। প্রশাসনের কাছে বন্ধের জন্য লিখিত আবেদনও করা হয়েছে।
আশফাক নিপুন তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘অতি সম্প্রতি তৌহিদী জনতার হুমকির কারণে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে “তাণ্ডব” সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ, সিলেটে পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ আর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আপনি এখনো পড়ে আছেন চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে? বন্দরের ব্যাপারে যেভাবে যেকোনো প্রতিরোধ মোকাবিলার ঘোষণা আসে আপনার কাছ থেকে, মব নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সে রকম কঠোর প্রতিরোধের ঘোষণা কবে আসবে আপনার কাছ থেকে? অবিলম্বে কালিহাতীতে “তাণ্ডব” প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন, যেকোনো পর্যটনকেন্দ্র, পাবলিক প্লেসকে ঝুঁকিমুক্ত করার ব্যবস্থা করেন এবং সবার আগে মবের উল্লম্ফন বন্ধ করেন। গত ১০ মাসে এটা না করতে পারার কাফফারা হিসেবে আগামী ১০ মাস আপনার মূল কাজ হওয়া উচিত এটা।’
এদিকে ‘তাণ্ডব’ সিনেমা প্রদর্শন বিষয়ে আয়োজক কামরুজ্জামান সাইফুল বলেন, ‘দর্শকদের কাছ থেকে ভালোই সাড়া পাচ্ছিলাম। বিভিন্নভাবে আমাদের কাছে হুমকি আসতে থাকে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।’ অপর আয়োজক সাজু মেহেদী বলেন, ‘হলটি দৈনিক ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য জেলা পরিষদ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়। পাঁচ দিনের ভাড়া অগ্রিম জমা দেওয়া হয়। হলের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র মেরামত, টিকিট ছাপা ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। শুরু থেকে একটি মহল চলচ্চিত্র প্রদর্শনের বিরোধিতায় নামে। প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেওয়া হয়েছে। পোস্টার লাগাতে দেয়নি তারা।
কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বন্ধ করার দাবি নিয়ে কিছু লোক আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি তাঁদের বলেছেন, প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে, এ ব্যাপারে তারাই সিদ্ধান্ত দেবে। এটা আমাদের কাজ নয়। তবে আয়োজকেরা নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি পুলিশকে জানাননি।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। জেলা পরিষদের হলটি ভাড়া নিয়ে তাঁরা সিনেমা চালাচ্ছিলন। এদিকে বন্ধ করার জন্য আমার অফিসে আবেদনও করেছে। তবে আমি ছুটিতে রয়েছি।’ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ওই হল ভাড়া দিয়েছিলাম। সঙ্গে কিছু শর্তও দিয়েছিলাম, তার মধ্যে অন্যতম ছিল, সেখানে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে সিনেমা চালানো বন্ধ করতে হবে। পরে কী হয়েছে আর জানি না।’