কালিহাতীতে গৃহস্থালিত গরু-মুরগির খামারে ভাগ্য বদল!

অর্থনীতি কালিহাতী কৃষি পরিবেশ

কালিহাতী প্রতিনিধি: কালিহাতী উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম পৌজান মুন্দইলে এক সময় যেখানে কৃষিকাজই ছিল জীবিকার একমাত্র অবলম্বন, সেখানে আজ সম্ভাবনার নতুন হাওয়ায় ভাগ্য বদল হয়েছে এলাকাবাসীর। সরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়িত ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্প’ বদলে দিয়েছে এখানকার মানুষের জীবনধারা, চিন্তাভাবনা ও আয়ের পথ।

 

এই প্রকল্পের আওতায় গঠিত হয়েছে প্রোডিউসার গ্রুপ (পিজি) ও ডেইরী সদস্যদের সংগঠন। প্রশিক্ষণ, প্রাথমিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় উপকরণ পেয়ে গ্রামের অনেক নারী-পুরুষ এখন যুক্ত হয়েছেন মুরগি ও গবাদি পশু পালনে। বিশেষ করে নারীরা ঘরের কাজের পাশাপাশি দক্ষতার সঙ্গে পালন করছেন দেশি জাতের মোরগ-মুরগি। ডেইরী সদস্যরা উন্নত জাতের গাভী পালন করছেন এবং নিয়মিত দুধ সংগ্রহ করছেন, যা বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে পৌঁছেছে টাঙ্গাইল শহরেও।

গ্রামের একজন পিজি সদস্য আমানত আলী বলেন, আগে আমরা এমন আয় করতে পারবো, তা কখনো ভাবিনি। কৃষিকাজেই দিন চলত, কিন্তু সেটা সব সময় লাভ দিত না। এখন গাভী পালন করছি, প্রতিদিন প্রতিটি গাভী থেকে গড়ে ৩৫-৪০ কেজি দুধ পাচ্ছি। সেই দুধ স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে শহরেও বিক্রি হয়, ভালো লাভ হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এর সঙ্গে আমি ঘাসের আবাদও শুরু করেছি। আগে গরুর খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হতো, কিন্তু এখন নিজের জমিতে ঘাস চাষ করি। মেশিন দিয়ে ঘাস কেটে গাভীদের খাওয়াতে পারি- তাতে সময়ও বাঁচে, গাভীও ভালো থাকে, দুধও বেশি দেয়। এই প্রকল্প না থাকলে এত কিছু হতো না। এখন মনে হয়, আমরা নিজেরাই পারি কিছু একটা করতে। প্রকল্পটা আমাদের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

একই গ্রামের শাহীন ও তাঁর স্ত্রী জানান, দেশি মুরগি পালন করে তাঁরা এখন নিয়মিত ডিম বিক্রি করছেন এবং এতে তাঁদের মাসিক আয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তাঁদের কথায় আগে যেখানে দিন পার করা কঠিন ছিল, এখন সেই জায়গা থেকে আমরা পরিবার নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে পারছি।

এই প্রকল্প শুধু ব্যক্তিগত আয় বা পারিবারিক সচ্ছলতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি স্থানীয় পর্যায়ে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। নারীদের হাতে এসেছে অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, বেড়েছে আত্মবিশ্বাস এবং কমে গেছে পুরনো নির্ভরতাভিত্তিক জীবনযাপন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু সাইম আল সালাউদ্দিন বলেন, এই প্রকল্প শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের গল্প নয়, এটি একটি সামাজিক রূপান্তরের উদাহরণ। পাশাপাশি এখান থেকে বায়োগ্যাসও উৎপাদন হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা দেখেছি, মানুষ কীভাবে নিজের চেষ্টা ও সরকারি সহায়তা মিলিয়ে বদলে ফেলতে পারে পুরো জীবন। আমাদের লক্ষ্য এই সফলতাকে আরও গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া।

সরকারি সহায়তা, সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ ও স্থানীয় জনগণের আন্তরিক প্রচেষ্টায় পৌজান মুন্দইল এখন শুধুই একটি গ্রাম নয়, এটি আত্মনির্ভরতার এক উজ্জ্বল প্রতীক। দেশের অন্যান্য গ্রামও চাইলে এই পথ অনুসরণ করে গড়ে তুলতে পারে একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *