
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের চার লেনের কাজ সাড়ে তিন বছরে অর্ধেকও হয়নি। প্রকল্পের সাত মাস বাকি থাকলেও মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয় এ রুটে যাতায়াতকারীদের। ঈদে এ ভোগান্তি আরও চরম আকার ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদন পায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এ সড়কের ১৩ কিলোমিটার কাজ পায় আব্দুল মোনায়েম লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সড়কের বেশিরভাগ কাজই এখনো বাকি। ৫ আগস্টের পর মহাসড়কের এলেঙ্গা হতে যমুনা সেতু পর্যন্ত তেমন কাজ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ঈদ ঘনিয়ে আসায় তারা টুকটাক সড়কের কাজ করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের এলেঙ্গার পর থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ চলছে। উত্তরবঙ্গগামী লেনে পুরোদমে চলছে কাজ। আগের তুলনায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। সড়কে কাজ থাকায় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ লেগেই থাকে। ফলে সড়কের এ অংশে যানজট নিত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদে এ ভোগান্তি আরও চরম আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কে পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি থাকার পরও যানজটের আশঙ্কা করছেন সড়কে চলাচলকারী পরিবহনের চালক ও যাত্রীরা। ঈদ এলেই তাড়াহুড়ো করে শুরু হয় কাজ। মহাসড়কে চার লেনের কাজ শেষ হয়েছে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত চার লেনের কাজ করছে। গত ঈদে চারলেনের কিছুটা সুবিধা পেলেও সার্ভিস লেনের কাজ শেষ হয়নি। এখনো মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে কাজ চলছে।
নাহিদুল হাসান নামের এক যাত্রী বলেন, ঈদে মহাসড়কে পশুবাহী যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়বে। এছাড়া যদি মহাসড়কে দুর্ঘটনা হয় তাহলে যানজটের সৃষ্টি হবে। পুলিশকে মহাসড়কে আগের থেকে দায়িত্ব আরো বেশি পালন করতে হবে।
গাজীপুরগামী বাসের যাত্রী সাফায়েত হোসেন বলেন, মহাসড়কে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচলে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ভূমিকা রাখতে হবে। মহাসড়কে যাতে যানজট না থাক সে জন্য আগে থেকেই সর্তক থাকতে হবে।
বাসচালক আবু সাঈদ বলেন, মহাসড়কে কমবেশি যানজট হবে। বিশেষ করে কোরবানি পশুর কারণে মহাসড়কে আরও চাপ বাড়বে। সেক্ষেত্রে মহাসড়কে যানবাহনের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্নস্থানে কাজ চলছে মহাসড়কের।
মোহাম্মদ সবুজ নামে আরেক চালক বলেন, এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত মহাসড়কের কাজ চলমান রয়েছে। যার কারণে এবার মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা রয়েছে। তবে পুলিশ যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে যানজট হবে না।
তবে জেলা পুলিশ বলছে, মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে ৬৫ কিলোমিটার এলাকায় পর্যায়ক্রমে ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ২৫টি মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করবে। ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তার ব্যাপারে এসব মোবাইল টিম কাজ করবে।
টাঙ্গাইল জেলা বাস-কোচ-মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, মহাসড়কে কমবেশি যানজট হবেই। তবে যানজট যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে এদিকে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা রাখতে হবে। মহাসড়কে যানজট নিরসনে পুলিশের সঙ্গে এবারও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করবেন।
তিনি আরও বলেন, ঈদের আগে শ্রমিকরা আন্দোলন করেন। সে কারণেও মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট নিরসনে যে সব কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। তা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে মহাসড়কে যানজট কম হবে। ঢাকার পুরানো গাড়িগুলো যাতে মহাসড়কে আসতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
যমুনা সেতুর ম্যানেজার (টোল অপারেশন) প্রবীর কুমার ঘোষ বলেন, ঈদে ভোগান্তি লাঘবে যমুনা সেতুতে আলাদা মোটরসাইকেলের বুথসহ উভয়পাশে ৯টি করে বুথ বসানো হবে। উভয় পাশে দুটি করে মোটরসাইকেলের জন্য লেন থাকবে। টোল আদায়ের সময় প্রচুর পরিমাণে খুচরা টাকা থাকবে। সার্বক্ষণিক টোল চলাচল রাখার চেষ্টা করা হবে। এছাড়া সেতুর পাশে একটি রেকার প্রস্তুত থাকবে।
প্রকল্প পরিচালক ওয়ারেসুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত সড়কের ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সাসেক-২ প্রকল্পের এলেঙ্গা হতে সেতু পর্যন্ত মহাসড়কের কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় এমন অবস্থার তৈরি হয়েছে। তবে প্রকল্প মেয়াদের মধ্যেই মহাসড়কের কাজ শেষ হবে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করে মহাসড়ককে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি লাঘবে মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হবে না।