
ভূঞাপুর প্রতিনিধি: ভূঞাপুর উপজেলার ভুক্তভোগী ডিজিটাল বিদ্যুৎ গ্রাহকরা মিটার রিডিং না দেখেই বিদ্যুৎ বিল করা ও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল আসায় নানা ভোগান্তিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন। এমন ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের গরমিলের নানা অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু কতিপয় কিছু মিটার রিডারদের এই ভুতুড়ে বিল ও অনিয়ম বন্ধে অসংখ্য ভুক্তভোগী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি।
জানা যায়, গ্রাহকদের অভিযোগ সময়ের বিল সময়ে না করে মিটার রিডিং না দেখেই বিল করছে মিটার রিডার। বিল সংশোধন করতে গেলেও পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। গ্রাহকদের থেকে বাড়তি সুবিধাও নেন রিডাররা। ফলে বছরের পর বছর এমন ভুতুড়ে বিল দিচ্ছে তারা।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিল ও মিটার রিডিংয়ের সঙ্গে মিল না থাকায় তার প্রতিকার চেয়ে জেলার ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামের ভুক্তভোগী আলতাফ হোসেন নামে এক বিদ্যুৎ গ্রাহক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
আলতাফ হোসেনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার (২৪ মে) দিনব্যাপী ওই গ্রামের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গিয়ে ভুক্তভোগীসহ অন্যান্য গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের কাগজ ও মিটার রিডিং সরেজমিনে দেখে দুদক। পরে বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে মিটার রিডিংয়ের গরমিলের সত্যতা পান তারা।
অভিযোগকারী আলতাফ হোসেন বলেন, মিটার রিডিংয়ের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিলের মিল নেই। প্রতি মাসেই অতিরিক্ত বিলের ঘানি টানতে হচ্ছে। মিটার রিডিংম্যান কোমল ও জাহিদকে বললেও তারা মিটার না দেখেই ভুয়া বিল করেন। এ নিয়ে ভূঞাপুর বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি। পরে বাধ্য হয়ে ভুতুড়ে বিলের প্রতিকার চেয়ে দুদকে অভিযোগ করি।
এ সময় আরও শতাধিক গ্রাহক তাদের এমন সমস্যা নিয়ে দুদকের কাছে ভুতুড়ে বিলের কাগজ নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিযোগ তুলে ধরেন। ভুক্তভোগীরা বলেন, কোমল ও জাহিদ মিটারগুলো দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে। তাদের টাকা দিলে বিল কমিয়ে দেন আর টাকা না দিলে পরের মাসে অতিরিক্ত বিল করেন। বিদ্যুৎ বিল বেশি আসার ব্যাপারে কথা বলেও তাদের কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না।
জিগাতলা গ্রামের ভুক্তভোগী রায়হান নামে একজন শিক্ষক বলেন, মিটার রিডিংয়ের সঙ্গে বিলের কয়েকশ ইউনিটের গরমিল রয়েছে। প্রতিমাসেই অতিরিক্ত বিল প্রদান করে আসছি। মিটার রিডারদের বারবার মিটার দেখে বিল করতে বললেও তারা মিটার না দেখেই মনগড়া, অতিরিক্ত ইউনিট বেশি লিখে বিল করেন। শুধু আমি একা নই, জিগাতলা গ্রামের প্রতিটা ডিজিটাল মিটারের বিদ্যুৎ গ্রাহক এমন ভুতুড়ে বিলের শিকার।
দুদক টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নুর আলম বলেন, ভুক্তভোগী বিদ্যুৎ গ্রাহকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভূঞাপুরের জিগাতলা গ্রামের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে শনিবার দিনব্যাপী অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মিটার রিডিং ও বিদ্যুৎ বিলের কাগজের গরমিলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষক্ষে অবহিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিউবো) খন্দকার কামরুজ্জামান বলেন, একজন গ্রাহকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা দুদক অভিযানে আসে। যেগুলো মিটারে সমস্যা, সেগুলো পরিবর্তন করে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হবে এবং মিটার পাঠক বা রিডারের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সঠিকভাবে পেলে অফিসিয়ালভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের তথ্য মতে, ভূঞাপুরে প্রায় ৫৩ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহকের মধ্যে প্রিপেইড মিটার রয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার এবং ডিজিটাল মিটার (পুরাতন) রয়েছে প্রায় ১৯ হাজার। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল, কালিহাতী ও গোপালপুর উপজেলার আংশিক কিছু এলাকাজুড়ে ভূঞাপুরের বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণের আওতায় এই ৪টি উপজেলার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন।